রিক্সাওয়ালা কলিম সেখ  
                 মোঃ খবির উদ্দিন


আমি রিক্সাওয়ালা, কলিম সেখ,
                 জীবন যুদ্ধের এক, পরাজিত সৈনিক;
সেই কাক ডাকা, শীতের ভোরে;
             শীর্ণ দেহে, রিক্সা নিয়ে বের হই, দৈনিক।


পাকা চুল, দন্তহীন মুখ, কোমর বাঁকা,
                         রিক্সা চালাতে, বল নাহি পাই;
সেই ছোট বয়সে, ধরেছি হ্যান্ডেল,
                      বয়স এখন কত, জানাতো নাই।


এ দেহের উপর দিয়ে, হয়েছে পার,
                    কত রোদ, কত বৃষ্টি, কত যে ঝড়;
রোদে পুড়ে, এ দেহ হয়েছে তামা,
                   তবুও থামেনি পথচলা, হেথা মোর।
            
চৈত্রের কাঠ ফাটা, দুপুরের রৌদ্র,
                       তৃষ্ণায় ফেটে যায়, বুকের ছাতা;
উঁচু নিচু পথ, ঘুড়তে চায়না চাকা,
                       হুঙ্কারি উঠে যাত্রী, বুঝে না ব্যথা।


শ্রাবণের ধারা, ঝরে ঝরঝর,
                     তবুও উপায় নাহি, ঘরে থাকিবার;
পেটের ক্ষুধা, মানেনা কোন ঝড়,
                 ক্ষুধার কাছে নাহি, কোন আপন পর।


যাত্রী বসে থাকে, রিক্সার ভিতর,
                   পলিথিন দিয়ে ঢাকা, তার চারিধার;
বৃষ্টির জল মাথায় নিয়ে আমাদের,
                      পৌঁছে দিতে হয়, ঠিকানায় তার।


পৌষের শীতে বুড়ো হার, কাঁপে থরথর,
                   তবু অপেক্ষা আমার, রাস্তার মোড়;
কখন আসবে, একজন নৈশ যাত্রী,
                   পৌঁছে দিয়ে তারে, ফিরে যাব ঘর।


এভাবেই আমার জীবন সংগ্রাম,
                  চলতে থাকে, ফিরে ফিরে বার মাস;
তারপরও পেটপুরে জোটে না ভাত,
                   সমাজের কাছে, আমি জীবন্ত লাশ।


ধনীর অপমান, গরীবের ভাগ্য লেখা,
                        আমিতো সামান্য রিক্সাওয়ালা;
কথায় কথায় অপমান, আর গালাগাল,
              কিলচড়ও চলে, হলে সামান্য অবহেলা।

মুক্তি যুদ্ধের কালে, বয়স আমার বিশ,
                         ইচ্ছে ছিল, আমিও যাব যুদ্ধে;
আমার জরিনা, তখন সন্তান সম্ভবা;
                   তাই রইলাম ঘরে, ইচ্ছের বিরুদ্ধে।


সেই আদরের সন্তান কফিল সেখ,
               বিশ বছর বয়স থেকে, আলাদা খায়;
বুড়ো বাপেরে দেখার, সাধ্যি নেই তার,
             তবে ইচ্ছে আছে কিনা, বলা নাহি যায়।


তাইতো পাঁচজনের এই পবিবারের
                     ভরণপোষণ, বুড়াকেই বইতে হয়;
একে একে পাঁচ মেয়ের দিলেম বিয়ে,
              দু'সন্তান সহ, মেঝটা ফিরে আসে, হায়।


ভাগ্য লিখন, পারেনা করতে খণ্ডন,
                       দেশের জ্ঞানীজনে বলে থাকেন;
রিক্সা চালানো আমার জন্মের ঋণ,
                তাই মেনে নিতে হয়েছে, এ অপমান।


রিক্সা চালক ভাইদের প্রতি আবেদন,
                       সোচ্চার হতে হবে, আজ সবার;
আমরাও মানুষ, আমাদের আছে,
                     সম্মানের সাথে, বাঁচার অধিকার।


অধিকার, সে নাহে কার দয়ার দান,
                  তাই আর সইব না, কোন অপমান;
আমরা খেটে খাই, নেই না কার ঋণ,
              সময় হয়েছে এবার, বুঝে নেব সম্মান।
                         তারিখঃ ২১-১০-২০২২ ইং;
                    ----------০০০----------