আজ আমি সবই দেখতে পাচ্ছি,
আমি পুনরায় জীবন্ত হয়েছি।
পেটের অন্ধকার থেকে মস্তিষ্কের প্রাঙ্গন পর্যন্ত
একটি সাপের মতো,
হামাগুড়ি দিতে দিতে পৌঁছায় অবাধ্য স্লোগান—
তিনদিন হয়ে গেছে।
তিনদিন হয়ে গেছে।


যেন এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা হিমায়িত হয়েছে আমার ঘরে,
মেঝে,ছাদ,চারটি দেয়াল—আমাকে ছাড়া,
সবই যেন আমার দর্শক!
সামনের জানালা দিয়ে তীব্র আলো এসে,
পড়ছে বিছানায়,পড়ছে মুখে—
যেন আমার দারিদ্র্যে আমার-ই আত্মীয়র চরম বিদ্রুপ।


আজ আমি সবই দেখতে পাচ্ছি,
আমার শরীর আজ যেন ফাঁপা কাঠামো,
হাড় আর চামড়াই—যা আছে বাকি।
বিছানায় শুয়ে আছে আমার এক রিক্ত অবয়ব।
আর আমি শূণ্য দৃষ্টিতে,ঘরটা দেখছি,
তিনদিন হয়ে গেছে।


দুপুরের তীব্র রোদে,উদ্দেশ্যহীন পদক্ষেপে,
রাস্তায় হাঁটছি,দুপাশে সুপারমার্কেট।
ঝলমলে সাইনবোর্ড,এখন আর পড়া যায় না,
শুধু দেখছি,কান্ত চোখে।
মানুষ যায়-আসে,আমাকে বারবার অতিক্রম করে,
তবু সবটা কেমন আবছা,যেমন কারো মুখমণ্ডলই নেই!


এই দোকানের শোরগোল,
এই চেয়ে থাকা পথ,
রেডিওর গান,
কারখানা থেকে আসা দূরের শতাব্দী,
আর আমি যা-ই শুনছি,যা-ই দেখছি,
সব যেন স্বপ্ন।
যেন সব আছে,আবার কিছুই নেই!


তীব্র রোদে,উদ্দেশ্যহীন পদক্ষেপে,রাস্তায়,
আরও সামনে,পানির ফোয়ারা দেখছি।কিন্তু
শক্ত কেন এ পানি?
যেন আটকে যাচ্ছে গলায়।
যেন করাঘাত করছে পেটে।
যেন হারিয়ে যাচ্ছে আমার সব চৈতন্য।


শরীরে ঘাম,আর নেই সময়—
তিনদিন হয়ে গেছে।


সর্বত্র অন্ধকার,পুকুরের ঘাট,পাথরের সিঁড়িতে
আমার নিস্তেজ শরীর,
আর উঠবার শক্তি নেই।
আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি,
চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছি,
যেন রুপার থালে এক সোনালী রুটি!


ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে চোখ,
বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট।


হে পৃথিবী,শোন—
     আমার ঘরেও চুলো ছিলো,
     আগুন জ্বলতো,রান্না হতো,
     গরম-গরম,স্বপ্নের রুটি।
    
ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে চোখ,
আমি কি মারা যাচ্ছি?


মা খুব অদ্ভুদ ছিলো—
রোজই নিজ হাতে খাওয়াতো,
স্নিগ্ধ হাত ছুয়ে যেত মুখমণ্ডল,
এক মুঠো হাতির...
এক মুঠো ঘোড়ার...
এক মুঠো ভালুকের...


মৃত্যু সুষুপ্ত হোক,বা যা-ই হোক,
পরম পরিতোষিক।
মৃত্যু সুষুপ্ত হোক,বা যা-ই হোক,
পরম পরিতোষিক।


    


(ভারতীয় কবি জাবেদ আকতারের কবিতা "ভুক" অবলম্বনে)