দমকা হাওয়ায় খুলে গেল সদর দরজাটা,
চারিদিকের কালো জঞ্জাল পেরিয়ে
মনটা চলে গেল সুদূর অতীতে-
বারো জনের পাত পড়ত বাড়ীতে,
মাটির দেওয়াল টালীর চাল
হইহই করছে মানুষ ৷
আজ ত্রিশ বছর পর বাড়ীটা খুঁজতে খুঁজতে এসেছি,
বাড়ীটা আছে এখনো
কিন্তু মানুষগুলো নেই-
ঝুল-কালী-জঞ্জালের স্তুপের মধ্যে কতগুলো মুখ,
চেনা নয় অচেনা ৷৷
ষোলো বছরে এসেছিলাম এ বাড়িতে
বিয়ের কনে হয়েও আলুর বস্তায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ক্লান্তিতে,
তারপর বহুদিন ধরে তিলতিল করে গড়ে তুলেছিলাম সংসারটা-
সংগ্রামের পর সংগ্রাম করতে করতে রিক্ত হয়ে যাচ্ছিল আমার সারা শরীর;
তাও ধরে রাখতে পারলাম না ৷৷
ধান সেদ্ধ করা,লঙ্কা বেটে লাল হয়ে যাওয়া হাত নিয়ে সেই স্কুল যাওয়া-
গর্ভবতি অবস্হায় উচ্চমাধ্যমিক পাশ দেওয়া-
সব যেন কেমন গল্পকথা মনে হয়!
মেয়েদের মানুষ করতে গিয়ে কখন যে নিজে মাঝবয়সী হয়ে পড়লাম,
বুঝতে পারিনি ৷৷
মনে পড়ে একা দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ীটা দোতলা করেছিলাম-
তারপর সবার চোখ পড়ল,
বাঁদরের পিঠে ভাগ করতে করতে শুধু বাড়ীটাই পড়েছিল!
তবু শেয়াল-কুকুরের টানাটানিতে সেটাও রইল না ৷৷
চোখের জলে ভিজে যাচ্ছে সারাশরীর,
আজ পনেরো বছর আমি ঘুমোই না-
ঘুমের ওষুধেও কাজ হয় না ৷
সবাই বড় ব্যস্ত,
কেউ সময় দেয় না ৷৷
তাই এতবছর পর আবার একবার শ্বশুরের ভিটেয় এলাম,
বাড়ীটা এখনো আছে,
কিন্তু চেনা মুখ বদলেছে অচেনা মুখে-
তুলসীতলায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বসে পড়লাম,
শরীরটা কেমন করছে,
মনটাও ভালো নেই৷
আমার ঘুম পাচ্ছে,
পনেরো বছরের না পাওয়া ঘুম
আজ আবার বহুদিন পর জীবনের শেষঘুম ঘুমোচ্ছি আমি ৷৷