ঝরা পাতার শব্দ
================
লাশবাহী কফিন নিয়ে বিমানটি
যখন আকাশে উড়লো
আমি তখন কবিতা লিখতে বসলাম;
বিমানের শব্দে ভারি হয়ে উঠল আকাশ
তান্ডব শুরু হলো মেঘেদের মধ্যে
কফিনের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসলো
চাপা কান্নার আওয়াজ
সেই শব্দ আমার কান পর্যন্ত পৌছালো না-
তাই একটি শব্দও লেখা হলো না কবিতার!!


ভেবেছিলাম বৃষ্টি ঝরবে-
তার কাছে শুনতে পাবো মৃত মানুষের খবর
আর সেই খবরটাই হবে কবিতার শিরোনাম।
বৃষ্টি ঝরলনা, মেঘেরা থমকে রইলো আকাশে
আমি নিঃশ্চুপ বসে রইলাম কলম হাতে ।।


প্রচন্ড রোদে আমার চোখ ঝলসে গেল
সূর্যের দিকে তাকানো গেল না
কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে পরে রইলাম
আর প্রতিজ্ঞা করলাম- আমি ক্ষান্ত হবোনা
একটিও শব্দ না লেখা পর্যন্ত ।।

মেঘের কান্নায় ভারি যানটি কখন
আকাশপথ ঘুরে মাটিতে নামবে সেই আশায়
অপেক্ষা করলাম দুপুর পর্যন্ত-
তারপর ছুটে গেলাম বিমানবন্দরে পিচঢালা পথে।
মাটির কাছে খবর নিতে কান পেতে রইলাম
ঘাসের উপর চিকচিক করছে বিষন্ন রোদ
পথ নীরব, মাটিও একেবারে নীরব ।।


মানুষের চিৎকার ভেসে এলো কানে
বাতাস ভারি হয়ে উঠল করুন আর্তনাদে
কান্নায় জলের স্রোতে বয়ে গেল চারিদিকে।
স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি
স্বজন হারানো মানুষের পাশে
কিছুসময় ভুলে গেলাম আমার প্রতিজ্ঞার কথা।।


বিশাল  বেদনার ভার কাঁধে  ফিরে গেল সকলে
আমার দৃষ্টিও হারিয়ে গেল
জীবিত ও মৃত মানুষের মিছিলে ।
বুকের মধ্যে ভীষণ পীড়া অনুভূত হয়
যেভাবে কফিন বনকারী বিমানটি
বিশাল শূন্যতা নিয়ে পথে পড়ে থাকে
তেমনি অজানা শূন্যতায় পড়ে থাকে
আমার কবিতা লেখার  ইচ্ছ।


বড্ড আক্ষেপ নিয়ে  আমিও রওনা দিই
আজিমপুর কবরস্থানের পথে।
একসময় শুরু হয় ঝরো বাতাসের  তান্ডব
শুকনো পাতার সাথে সবুজ পাতারাও
ঝরে পড়লো  নরম মাটি বসানো কবরের উপর
বিকট শব্দে ভরে উঠলো কবরের চারপাশ-
কয়েকটি শব্দ তুলে রাখি নিজের জন্য-কবিতার জন্য
আর তা দিয়েই লিখে রাখি কবিতার শিরোনাম-
"ঝরাপাতার শব্দে ঢেকে যায় কিছু স্বপ্ন"


(নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ব্যাক্তিদের জন্য আমার ভালবাসা ও শ্রদ্ধা )
২২ মার্চ ২০১৮
ঢাকা বাংলাদেশ