স্বপ্নের সত্যায়ন
============
হুইসেল বাজিয়ে ট্রেনটি স্টেশনে এসে থামলো।
শীলা যাত্রীদের ভিড় ঠেলে খুঁজতে থাকে
সেই মানুষটির মুখ।
যাত্রিরা একে একে চলে যায় স্টেশন ছেড়ে
ট্রেনটিও পুনরায় হুইসেল বাজিয়ে
পরের স্টেশনের দিকে ছুটে চললো।


সুকান্ত আজও আসে নি।
শীলা পা বাড়ায় ঘরের দিকে।
ওর নাম শোভন,
শীলা ভালবেসে শোভনকে সুকান্ত বলেই ডাকতো।


ভোর রাতে শীলা সেদিন স্বপ্নে দেখলো
বাবা তার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করছে।
সকালে উঠেই ছুটে গেছে বাবার কবরের কাছে।
পাশে বসতেই বাবা ওর কানে কানে কী সব বললো,
বেশ খুশি মনেই শীলা ঘরে ফিরে এলো।


আর একদিন ভোরবেলার স্বপ্ন-
বন্ধু মিতার সাথে নদীতে সাঁতার কাটছে
আনন্দে ওরা দুজনই অথই জলে
থই থই করে নাচতে লাগলো।
অথচ শীলা সাঁতার কাটা তো জানেই না
বরং জলের ঢেউ দেখলেই ভয়ে কাঁপতে থাকে।
সকালে ঘুম ভাঙলো বৃষ্টির শব্দে।
অঝোরে বৃষ্টি, উঠোন ডুবে যাবার অবস্থা।


ভোর রাতের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়-
এই ভেবে শীলা আরও অনেকদিন
এইভাবে ছুটে এসেছে স্টেশনে।
ম্লানমুখে ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
মনকে সান্তনা দিল-
আজ আসে নি, অন্যদিন ঠিক সুকান্ত আসবে।


শীলা.........
শীলা চমকে ফিরে তাকালো স্টেশনের দিকে।
অমল। সুকান্তর ছোটবেলার বন্ধু।
কলকাতায় চাকুরী করে।
ওখানেই স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে বাস করে।
প্রায় ছুটি কাটাতে বাড়ি আসে বাবা মায়ের কাছে।
শোভন আর অমল একই অফিসে চাকুরীও করতো।
আমল শীলার একটি হাত ধরলো-
তুই আর কতদিন এমনি করে স্টেশনে
এসে দাঁড়িয়ে থাকবি ?
কতদিন অপেক্ষা করবি ওর জন্য?
কেন বিশ্বাস করিস না শোভন কোনদিন ফিরবে না?
ওখান থেকে কেউ কখনো ফেরে না.....


অমলের কথায় শীলার চোখে মুখে বিন্দুমাত্র
পরিবর্তন দেখা যায় না।
কারণ সে জানে একদিন পিছন থেকে
রূপশীলা বলে কেউ ডেকে উঠবে-
রূপশীলা। হ্যা শোভন ওকে রূপশীলা বলেই ডাকতো।


অমলের পাশাপাশি পা ফেলে শীলা বাড়িতে ফিরে আসে।
দুজনের মধ্যে আর একটিও কথা হয়না-


৭ এপ্রিল ২০১৮
ঢাকা বাংলাদেশ।