ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে কেউ
বলেছে, ওকে লুকাও গৃহকোণে ;
ঐ নারীর ক্ষুন্ন হয়েছে মর্যাদা
তার অস্পৃশ্য ছায়া না পড়ুক উঠোনে ।।


বন্ধ করো ওর গগণ বিদারী চিৎকার
তাকে বিতারিত করো অন্ধকারে ;
তিলতিল করে সাজানো সংসারে
সেই নারী আজ মৃত কলঙ্কভারে ।।


ঘৃণ্য পশুর আঁচড় রক্তাক্ত করেছে দেহ
সেই শোক এখনও তো যায় নি ঘুচে ;
ওরা খুলে ফেলেছে তোমার দেহসজ্জ্বা
কপালের তিলক দিয়েছে মুছে ।।


মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে সহাস্যে তুমি
করেছে সংকল্প, ফেলেছ দীর্ঘশ্বাস ;
বাঁচাতে হবে এই দেশ, এই মাটি
দিয়েছ বাঙ্গালীরে প্রাণের আশ্বাস ।।


পিশাচের হুঙ্কারে কেঁপে উঠেছে মাটি
নিথর দেহের উপর বয়ে গেছে ঝড় ;
বিষাক্ত হয়েছে চারপাশের বাতাস
মুখ ফিরিয়েছে স্বজন, ভেঙ্গেছে ঘর ।।


সম্ভ্রম হারিয়েও তুমি জয় করেছে ভয়
বিদ্রুপ আর ঘৃণায় বেড়েছে লাজ ;
শরীর বেয়ে গড়িয়েছে স্বাধীনতা
শৃঙ্খলিত দুই পায়ে তুলেছে আওয়াজ ।।


দেশের জন্যই তো তুমি বলি হয়েছ
কাধে তুলে নিয়েছ কলঙ্কের ভার ;
দেখ, লাল-সবুজ পতাকার আদলে
গাঁথা আছে তোমার গৌরব-অলঙ্কার ।।


বুকের ভিতর জ্বলেছে যন্ত্রণার আগুন
পুড়িয়েছ স্বপ্নের বীজ, ক্ষয়েছে আয়ু ;
ভেঙ্গে ফেলো আজ অবোধ্য দেয়াল
পরম নিশ্চিন্তে নাও একমুঠো বায়ু ।।


ঘৃণ্য স্পর্শে শরীরের ঝরেছে রক্ত
লালসার কঠিন লাভায় পুড়েছে অঙ্গ ;
ক্ষীণ আশা নিয়ে গড়েছ দূর্গ
তুমি যুদ্ধা, মহিয়ান করেছে বঙ্গ !!


পেয়েছ আজ শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি
যন্ত্রণার তাতে কি হয়েছে হ্রাস !
নাকি বুকের ভিতর জমা পাথরে
এখনও বেজে উঠে দানবের ত্রাস ?


৪৮ বছর বুকে জমিয়েছ কষ্ট
বারবার মরেছ তীব্র দহনে ;
নগ্নতার সিড়ি ভেঙ্গে এনেছ জোয়ার
সূর্যকে রাঙিয়েছ ঊষার গগনে।।


যোনিপথ বেয়ে গড়িয়েছে রক্ত
তৈরি করেছ এক অমূল্য মানচিত্র ;
তোমার গর্ভে লালিত সোনার বাংলা
তুমিই তার একক জননী-পবিত্র ।।


তুমি সাহসী বীর, তুমি অপরাজিতা
এক দ্রুত সত্য, নক্ষত্রের আকাশে ;
একদিন ঘৃণায় মুখ ফিরিয়েছে যারা
তারাই এসেছে তোমার মহিমা প্রকাশে ।।


তোমার হাতেই মানায় সুবর্ণ কাঁকন
স্বর্ণলতায় গেঁথে রাখি তব সম্মান ;
পাদপ্রান্তে রাখি গৌরবের জয়টীকা
স্বাধীনতার সূর্যে তুমিই দীপ্তিমান ।।


মিনু গরেট্টী কোড়াইয়া
২১ জুলাই, ২০১৯,
ঢাকা, বাংলাদেশ।