কেদার লেনের কিশোরবাবু, কিশোর মোটেই নন,
ষাট পেরিয়ে শয্যাশায়ী, মনে কঠিন পণ ।
গন্ডা গন্ডা ওষুধ গেলা, মেজাজ তাঁর কাট্টা,
তেল কই আর ভাত চাই, ডাব চিংড়ি একটা ।
শাবু খিঁচুড়ী মুখে রোচে না, ব্যাধির উপর ব্যাধি,
বদ্ধ স্মৃতি চেঁচিয়ে ওঠে,'কাতলা আনো কালিয়া রাঁধি'
বৌ এর চোখে চোখ মিলিয়ে, মন ভোলানোর খেলা,
মাছের ঝোল রাঁধতে কেমন, দাওনা এই বেলা ।
ইলিশ মাছের সরষে মালিশ, গরম ভাতে ভাপা,
গোটা বাটার পিটপিটে ঝাল, লাল মরিচ মাখা ।
তেলাপিয়ার তেল তেলে ঝাল,নাক থেকে জলগড়ায়
মুচমুচে ইলিশ ভাজা, স্বাদের বহর বাড়ায় ।
মুড়ি ঘণ্ট, পুঁটি ভাজা, বোয়াল মাছের রসা ,
আঙুল চেঁটে খেতাম কেমন, রুই টমেটো কষা ।
মিরিক পোস্ত কাঁচালঙ্কায়, চিতল মাছের মুইঠা,
গলদা চিংড়ির মালাইকারি, খেতেম বড়ো দুইটা ।
গিন্নি আমার রাঁধত বড়, দই কাতলা, ক্যাঁকড়া ঝোল
কালো জিড়ার ফোড়ন দিয়ে পাকত আম শোল ।
বৃষ্টি ভেজা বিকেল মানে, পমফ্রেটের কাটলেট্ ,
গরম চা আর পাবদা চপ্, ঘরে ফিরতে নেভার লেট্।
তপসে ঝাল, আড় পেঁয়াজা, ভেটকি মাছের পাতুরি,
দই পোনাতে ভাত মাখতাম, সঙ্গে ট্যাংরা চচ্চড়ি ।
বেলে ভোলার বাটি ভাজা, মাছের ডিমের বড়া ,
দোহাই গিন্নি, দাওনা এনে, এ শাস্তি বড় কড়া ।
মাছের পদ আসছে শেষে, সুবাস নিই ঘ্রাণে ,
ঢোঁক গিলে হাত বাড়াই, ওমা বেড়াল নিয়ে ভাগে ।
আচমকা ধড়ফড়িয়ে, চোখটি খোলেন তিনি ,
ধড়াস্ ধড়াস্ বুকটি কাঁপে, একি স্বপ্নে ছিলাম আমি।
গিন্নি ভেঙায়, ' আ ম'লো যা, এখন শুলে নাকি ?
সত্বর যাও কাতলা আনো, কাতলা কালিয়া রাঁধি ' ।