একটি বাঙালি কবিতা
>>>>>>>♦<<<<<<<


একটা কবিতা নিয়ে ঘুরছি বুকের মধ্যে-
ভাঁজ খুললেই ষড়ঋতুর সোঁদাগন্ধে ছড়িয়ে পড়ে আটষট্টি হাজার বর্ণমালা।
ভাঁজে-ভাঁজে গফুর-কুমুদদের চেনাজানা শক্ত হাতের লাঙলের দাগ;
একেকটি সরু কাদা রাস্তা।


থোকা থোকা বর্ণমালায় সাজানো শব্দ-
বাক্যে ঝরে পড়ে বাঙালিবধূর নিপুণ সূতোয় আঁকা
শাপলাবিলের মন-মাধুরী খিলখিল হাসি।
কলমির দুলদুলে লতায় বেয়ে চলে কবিতার আঁকাবাঁকা মেঠোপথ।
মাঝখানে শাদাজল পদ্মা-মেঘনার উত্তাল ঢেউ।
বুকচিরে নাও বায় হারান মাঝি।
ঘরে তার প্রিয়ার অপেক্ষার টান।


অনুভূতির পাল তুলে পঙক্তিঘাটে রাতভর খেয়া বায় মাধব পাটনি।
সাথি তার দুঃসাহসী প্রহরী ঝাঁকড়াচুলের বুড়ো তালগাছ।
নলখাগড়ার মাথার পরে রুপোর চাদর বিছিয়ে জোনাকির হাট বসে।
জোছনার পিঠে ভর করে নামে চন্দ্রপরী-
খোকার শালুকচোখে ঘুম এঁকে খেলা করে সারারাত...।


প্রহরের হাত ধরে বেরিয়ে পড়ে বিষণ্ণ রাত।
রুপাই-এর বাঁশির সুর ধরেধরে পৌছায় ভোরের দুয়ারে।
ভানুর প্রদীপ জ্বেলে দুয়ার খোলে লজ্জাবতী সাজু।
সোনাবৌয়ের আলতারঙা পা'য়ে আবির মাখে সকালের নরম ঘাস।
সমুদ্রের নিঃশ্বাসে দোল খায় উঁচুউঁচু নারকেল শাখা।


পাখির ডানা ঝাপটানিতে জেগে ওঠে ঘুমন্ত উঠোন।
বেলা বাড়ার গান গায় শরীরের ঘাম।
সাপুড়ের বীণ বাজে ছগা'র মাঠে, জড়ো হয় একদল ছেলেবুড়ো।
সুযোগের ছাড়া পেয়ে মনের সুখে কচিধান খায় উদোম গরুগুলো।
তাই নিয়ে ক্যাচাল পাড়ে ছোলেমানের মা'য়।
দূর মধ্যমাঠে পল্লির সুর ধরে আব্দুল-
"পরের জমি, পরের বাড়ি ঘর বানাইয়া আমি রই, আমি তো আর ঘরের মালিক নই"
হুরুর, ঠায়, ঠায়, হ্যোট!


একেকটি বিস্ময়; এক-একটি নতুন সূর্যোদয়!
প্রতিটি দাঁড়ি,কমা; বিবর্তনের নোঙর।
প্রত্যেকটি বিরাম চিহ্ন কালোত্তীর্ণের চিরন্তন সাক্ষী।
সমগ্র কবিতা এ' বাঙালের মানচিত্র-
বাঙ্গালী হয়ে ওঠা জলমাটির আটপৌরে ইতিহাস।।


    >>>মিটুল কুমার বোস  12/03/17 রবিবার