সেঁজুতি, মনে পড়ে সেদিনের কথা?
যেদিন প্রথম ধরেছিলে হাতটা, সে কী দৌড়!
দৌড়ে চলে গেলাম বিশ্বাস দিঘির পাড়ে, অশ্বত্থ গাছটা ছুঁয়ে তুমি বলেছিলে- যাবে না তো ভুলে!
ভাষা ছিলো না আমার- শুধু নীরবে তোমার ডাগর চোখে নিরিখ বেঁধে নিষিক্ত হয়ে পড়ে ছিলাম।


মনে পড়ে সেদিনের কথা?
পহেলা বৈশাখের রমনা মেলায়-
তুমি পরেছিলে লালপেড়ে সাদা শাড়ী,
মেলার ভীড়ে বিকেলের সূর্যটা সেদিন দেখা যায়নি, তবে, তোমার কপালে সোনা রোদ্দুর দেখেছি--
যা, ঘন রক্তিমে কেন্দ্রভূত হচ্ছিলো প্রতিনিয়ত  
লাল ডগমগ সূর্য; কপালের লাল টিপ।


মনে পড়ে সেদিনের কথা?
আমাকে কবি বানানোর অদম্য স্বপ্ন নিয়ে
দারুণ উৎসাহে প্রকাশকের দ্বারেদ্বারে ঘুরে
অবশেষে নিরুৎসাহিত হয়ে কেঁদে ফেলেছিলে-
আমারই বুকে মাথা রেখে।


মনে পড়ে সেদিনের কথা?
প্রথম যেদিন জয়েনিং কার্ডটা পেলে-
আমি তখনো বেকার, জীবনের সবটুকু আনন্দ নিয়ে- মেসের বড় ভাইদের কাছ থেকে ধার করা টাকায়- মিস্টি খাওয়ালাম বন্ধুদের----
আমাদের প্রেমের স্তুতি গেয়ে জয়োধ্বনি করল সবাই।


এরপর হঠাৎ, শুরু হল দিন বদলের পালা...........!


সবকিছু বদলে গেল তোমার! বদলে গেলে তুমি!!
সস্তা শাড়ির বদলে দামী  জিন্সের প্যান্ট,
রিক্সার বদলে ট্যাক্সি-
পুরনো  ঢাকার বাসা ছেড়ে- গুলশানে ফ্লাট বাড়ি, রিসিপশনার থেকে একেবারে হাই প্রমোশন!
বস'এর একান্ত সেক্রেটারি।


অনেক বদলে গেছ তুমি!
তোমার সেল ফোনে এখন আর আমার নাম্বারটা থাকে না,
আমার একটাও কবিতা ছাপা হল না বলে--
তুমি এখন আর কেঁদে কেঁদে বুকটা ভাসাও না।
মাত্র একদিন দেখা হলো না বলে--
এখন আর অভিমানে মুখটা ঘুরিয়ে বসে থাক না,
সেই যে বিশ্বাস দিঘির অশ্বত্থ গাছ ছোঁয়া প্রতীত মুখ'টা- তোমার মুখে এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
আজকাল তোমার মুখখানা বড়বেশি কৃত্রিম ; রং করা পুতুল, মনে হয় মুখের নামে মুখোশ!


বিশ্বাস করো! আমি সেই আগের মতোই আছি।
শুধু মেস'টা ছেড়েছি, ধার করা মিস্টির টাকাটা সময় মতো শোধ দিতে পারেনি বলে।


জানো? আমার নতুন নতুন কবিতা শুনে এখনো বন্ধুরা হাত তালি দেয়, প্রকাশকের দ্বারে হেঁটে হেঁটে ছেড়া জুতোটাকে আরো বেহাল করি, এখনো টিউশানি করি, তবে আগের থেকে দুটো বেশি! সিগারেট ছেড়েছি দাম বেশি বলে- তবে কাশিটা দারুণ সস্তা!
দূরে দাঁড়িয়ে থাকি- প্রতিদিন দেখা মেলেনা তোমার; ফেরাটা তোমার নিজের ইচ্ছায় হয়না বলে।


এখনো প্রতি শুক্র বার- ছুটে যাই বিশ্বাস দিঘীর পাড়ে, কালের স্বাক্ষী সেই অশ্বত্থ গাছটা পথ চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বলে।
যেটি ছুঁয়ে তুমি আমায় বলেছিলে- যাবে না তো ভুলে!
ঠিক সেখানেই হাত রেখে বলি; তাই কি কখনো হয়?
তোমাকে কি ভুলা যায়? কখনো কি ভুলতে পারি?
---------মিটুল কুমার বোস::১৬/০২/১১.বুধবার।