কি লিখবো ভাই বাঁশের কথা
বাঁশ বাগানে চাঁদের মাথা
শস্য ক্ষেতের ছাই, বাঁশ পোড়ালে পাই
জন্মের পর খেয়েছি দোল বাঁশের দোলনায়
যৌবনে উড়িয়েছি ঘুড়ি, বাজিয়েছি বাঁশের বাঁশি
বার্ধক্যেও মোর হাতে বাঁশের লাঠি।
গরুর কাঁধে রেখে বাঁশের জোয়াল
হাল চাষ করতো বাবা ধরে লাঙ্গলের বাট
বাঁশের মই-এ বসে চলতাম গরুর পিছে।
বাঁশের তৈরী গোলা, সোনার ধানে হতো পুরা
কোমরে লয়ে বাঁশের ওড়া-ঝুড়ি,
মা চাঁচিরা হতো বুড়ি।
ঘাটে বেঁধে বাঁশের আঁটি, হাটে যেতো মাঝি
বৈশাখের ঝড় ঠেকাতে, খড়কুটোয় দিতো ছাওনি
দিলে বরাক বাঁশের পালা, আসতো না ঘরে বালা।
বাঁশের তৈরী পাখা, বউ এঁকেছে ফুল আঁকাবাঁকা
গরুর মুখের ঠুসি, কঞ্চি বাঁশের তৈরী।
যদি হতাম বাঁশ, মিটতো মনের আশ
বাঁশে হতাম বাবার জায়নামাজের পাটি
ধন্য হতো বাঁশের জাতি।
বাঁশের তৈরী তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা
বাঁচিয়ে ছিলো বহু কৃষকের জান
আজ বাঁশের রাজত্ব হয়েছে বিরান।
শস্য ক্ষেতে বাঁশের বেড়া, গোয়াল ঘরে গোঁয়ার
জোয়ারে ভাসিয়ে বাঁশের ভেলা
বাবা নিয়ে যেতো আমায় দেখাতে বৈশাখী মেলা।
যারা খেয়েছেন শিক্ষকের হাতে কঞ্চির বেত্রাঘাত
জীবন হয়েছে ধন্য, কাজ করেছেন মানুষের জন্য
আদর সোহাগ পেয়ে হয়েছি মোরা বন্য।
বাঁশের চাটাইয়ে ঘরের বেড়া
খেক শিয়াল তাকায় হয়ে ত্যাড়া
হাস মুরগী থাকে নিরাপদ, বেড়া হলে মজবুত।
বাঁশের তৈরী মাছ ধরার অস্ত্র চাঁই, টইয়া ও পলো
এই বাঁশ দিয়ে তৈরী হয় খরা জালের আসবাবপত্র।
ঢেঁকিতে ভানা ধান ঝাড়তো কুলোয় চাল
চালতো ধান বাঁশের চালোইনে।
বাঁশের মোড়ায় বসে, প্রেয়সী আমার মৃদু হাসে
গায়ের বধু বাঁশের সাঁকো পারাপারে
দক্ষিণা বাতাসে শাড়ীর আঁচল উড়ে।
বুকের উপরে বাঁশের ফালি তার উপরে চাটি
সর্বশেষে থাকে মাটি, এইটাই হলো খাঁটি
চারপাশেতে বাঁশের বেড়া, বদ্ধ ঘরে একেলা।