ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার বুকে ছোট্ট একটি গ্রাম
পূর্ব পুরুষেরা আদর করে রেখেছিলেন বড়মুড়া তার নাম।
মায়ের মুখ করে আলো এসেছিলাম ভবে
এখন আমি ভাইরাস সমাজের লোক বলে হেঁসে।
জন্মেছি অজপাড়া গাঁয়
অনেকে গাঁয়ের মাথায় ছাঁই ঢালতে চায়।
এ গাঁয়েতে মা ঘুমায়, মায়ের পাশে ভাই
মুখে বললেই কি আর ছাঁই ঢালা যায়।
বড়মুড়ার মাটি শৈশব কৈশোর স্মৃতির ঘাঁটি
যৌবনের স্মৃতি লেপ্টে আছে গাঁয়ের মৃত্তিকায়।
সবুজ শ্যামল ঘাসে মায়ের হাঁসি ভাসে
নিঃশ্বাসে ছাড়ি কাদামাটির ঘ্রাণ, অটুট রাখবো জন্মস্থানের মান।
গাঁয়ের নাম বড়মুড়া বুক ফুলিয়ে বলি
সত্য ন্যায়ের পথে দিগন্তের দিকে হাঁটি।
বাঁশ বাগানে বকের বাসা, কাঁঠাল বাগানে ঘুঘুর
স্মৃতি গুলো সারা বাড়ি নৃত্য করে পায়ে সোনার নুপুর।
কড়ই গাছে চিল, শাপলা ভরা ঝিল
গোয়াল ভরা গরু, খুব ভাবায় ছেলেবেলার উড়ু উড়ু।
কালবৈশাখী ঝড়ে, রাখতে পারতো না মা ঘরে
ছুটে গিয়ে কুড়াতাম আম, তার সাথে জাম।
মুখে নিলে গাঁয়ের নাম, তুলে নিবে ছাল
ছাল দিয়ে বানিয়ে পাল ভাসিয়েছি তরী, এ গাঁয়ে যেন আমি বারবার মরি।
ঘরের কোনে চড়ুই পাখি, তালগাছে বাবুই
সোনার ধানে মাঠ ভরা, দূর্বাঘাসে উঠোন।
এমন গ্রাম কোথা পাবে, ঢাকা সবুজের সমারোহে
চাষীরা সব সোনা ফলায়, অন্তরাতে নেয় বড়াই।
বড়মুড়া মোর মা, এই বড়মুড়া মোর গাঁ
মায়ের বুকে মাথা রেখে-গায়ের বুকে পা, নিঝুম রাতে তাড়িয়েছি খেঁকশিয়ালির ছা।
মাঘের শীতে জওয়ান বুড়ো এক সাথে
বেইন্নালার রোদে ওম লাগাতো গায়।
সততা করে পুঁজি, দেশ-বিদেশ ঘুরি, কোত্থাও নাহি পাই
এমন সোনা মাখা গ্রাম, বড়মুড়া তার নাম।
সারা গাঁয়ে ছোটছোট টিলা, টিলার বুকে ভিলা
নীচে বিস্তৃত ধানক্ষেত, হাঁসের চড়চড়ি।
ধানক্ষেতের আইলে বাঁশের কঞ্চি খুঁচিয়ে কুড়িয়েছি শামুক
পল্লীবালাদের সাথে হাঁটুজলে তুলেছি শালুক।
হাইঞ্জা বেলা হাঁস না ফিরলে ঘরে
আয় আয় চু-চু--- বলে মা ডাকতো পুকুর পাড় ঘুরে।
আইডা ভাত উঠোনে ছড়িয়ে
আয় আয় টি-টি--- বলে ডাকতো মুরগীকে।
বাঁশঝাড়ের আড়ালে বাছুর যদি থাকতো লুকিয়ে
শুনে মায়ের মুখে হাম্বা-হাম্বা ডাক, বাছুর আসতো দিয়ে হাঁক।
মাটির বেড়া টিনের চাল, এ আমার গাঁয়ের হাল
দিন কাটে বেশ, দিন শেষে থাকেনা ক্লেশ।
গাঁয়ের আঁকাবাঁকা মেঠোপথে ঢালা কালো পিচ
মুখের ভিতর দু'আঙুল ঢুকিয়ে আগের মতো আর দেয়না কেউ শিষ।
গাঁয়ের কালচার পায়ে পিষে আনছে আধুনিকতা
মান্যগন্য বাচনভঙ্গি খায়ছে পুলাপানরা।
বড়মুড়ার ঘাসে, মৃত্যু যদি হাসে, নিয়ে এসো ঘরে
নির্জনে করবো আলিঙ্গন, ছাড়বো বাড়ি, বাঁধবো ঘর।
স্কুলের পূর্ব পাশে, মা-ভাই থাকে আমার আশে
রাখিও তাদের পাশে, যখন যাবো শেষ নিদ্রায়।
তারিখঃ ২১/০১/২০২২
বড়মুড়া, কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া