তুমি তো কবি
অনেক কথা সাজিয়ে গুছিয়ে লিখতে পারো
তোমার কবিতা গুলো আমি যতই পড়ি ততই অতীতে হারিয়ে যাই
তবে যা লিখো তা মিথ্যে নয়, অবাস্তব নয়
হৃদয়ের রংতুলি দিয়ে নিখুঁতভাবে সাজিয়ে লিখ।


তুমি কেবল তোমাকে ছেড়ে আসাটাই দেখলে
কিন্তু কেন তোমাকে ছেড়ে এসেছি তা কি কখনো জানতে চেয়েছো?
হ্যাঁ তুমি মাঝেমধ্যে সিঙ্গাপুর থেকে ফোন দিতে
অনেক কিছু বলতে চাইতে
আমি তোমাকে এড়িয়ে যেতাম, ব্যস্থতার বাহানা দেখিয়ে ফোন কেটে দিতাম
তারপর আমি তুষের অনলের মতো পুড়ে পুড়ে ছাই হতাম।


তুমি তো জানো না,
তোমার অগোচরে আমাকে কতকিছু বলা হতো
আমি কিন্তু কখনোই তোমার কাছে অভিযোগের বাক্স খোলে বসিনি
আমি কেবল চেয়েছিলাম তোমাকে নিয়ে কোথাও নিরিবিলি থাকতে
তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে_তোমার হাতটি ধরে পথ চলতে।


তুমি হয়তো ভাবছো আমি তোমাকে ছেড়ে এসে সুখেই আছি
হা আমার পায়ের নীচে সুখ নৃত্য করে
মাথার উপর ছাদে বাদলের বৃষ্টি পড়ে
তারপরও আমি তোমাকে ছাড়া সুখে নেই
প্রতিটি রাতে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়
এমন কোন রাত নেই যে তোমার বিরহে বালিশ ভিজে না।


তুমি হয়তো আমাকে ভুলতে ছাইপাঁশ খেয়েছো
সিগারেট দিয়ে হাত পুড়িয়েছো
বহুবছর ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়েছো
আমি কখনো এমনটি চাইনি
তোমার ক্ষতি আমি আজ-ও কামনা করিনি
এতো ছাইপাঁশ খেয়েও ভুলতে গিয়ে ভুলতে পারনি
রাত জেগে ভাবো_কবিতা লিখ।


আমি তো কেবল শুধু তোমাকেই ছেড়ে আসিনি
আমাদের ভালোবাসাকে খুন করে
রক্ত দিয়ে এই হাত রাঙিয়েছি।
আমাদের মেয়েটার কথা যখন মনে হয়
হৃদয়ে রক্তের স্রোত গঙ্গা স্রোতের মতো বয়
বুকের দুধ পান করাতে পারিনি_যত্ন করতে পারিনি
নিজ হাতে গোসল করিয়ে_দুধ মাখা ভাত খাইয়ে দিতে পারিনি।


আজ মেয়েটার দশ বছর_আচ্ছা সে কি কখনো আমার কথা জানতে চায়?
সে কি কখনো জিজ্ঞেস করেছে তোমায়
আমার মা কোথায়? দেখতে কেমন?
জানি জিজ্ঞেস করবেনা
সে তোমার মতোই একরোখা এবং জেদি হবে
সে তো তোমারই মেয়ে_তাই-না?
তোমার বিরহ_তোমার মেয়ের বিরহ হিংস্র জানোয়ারের মতো চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে
দীর্ঘশ্বাসে ভারী হচ্ছে দেয়াল বেষ্টিত কক্ষ।


তুমি হয়তো ভাবছো
তোমার জীবন থেকে চলে এসে তোমার কোন খোঁজ খবর রাখিনি
তুমি যখন সিঙ্গাপুর থেকে অসুস্থ হয়ে দেশে এসে
ঢাকা স্কয়ার হসপিটালে ভর্তি হলে
তোমার স্পাইনাল কর্ড ফেটে ডানহাত_বাম পা অবশ হয়ে গিয়েছিলো
আমি তোমার সব খবর রেখেছিলাম
তোমার গলায় অস্ত্রোপচার হয়েছিলো
ঘাড়ের স্পাইনাল কর্ড পরিবর্তন করেছিলে
তোমার কাছে যাওয়ার মতো সাহস আর সেই মুখ আমার ছিলোনা।


তুমি তো কবি
তোমার কলমের তীক্ষ্ণতা ক্ষুরধার স্রোতের মতো
সাগরের চেয়েও গভীর তোমার হৃদয়ের গভীরতা
তুমি আজ মগ্ন নব-নব সৃষ্টিতে
সৃষ্টি সুখের উল্লাসে হও আত্মহারা।


তুমি বেঁচে থাকার সাহস কুড়িয়ে নাও সৃষ্টি থেকে
তোমার ব্যাথার দেয়াল আঘাতে আঘাতে এতোটাই শক্ত হয়েছে
আর কোন আঘাত ঐ দেয়াল ভাংতে পারেনা
কোন জলোচ্ছ্বাস রুখতে পারেনা তোমার সৃষ্টির পথ।


আমি তোমার বিরহে বিরহিণী
হে কবি ঠাঁই দাও মোরে_তোমার ঐ গভীর হৃদয়ে
আমি আর-একবার তোমাকে পাশে নিয়ে
জোছনা ভরা রাত উপভোগ করতে চাই
স্নিগ্ধ ভোরে ভেজা চুলে চায়ের টেবিলে মুখোমুখি বসে
প্রাণ-ভরে দর্শন করতে চাই।


তোমার ছন্দময়ী কথায় মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে পারো
অথচ, তোমার স্বপ্ন কালবৈশাখীর ঝড়ে এলোমেলো
আহত মানুষের হৃদয়ে শক্তি সঞ্চয় করে পথচলা শিখাতে পারো
অথচ, তোমার পথ দূর্গম_এই দূর্গম পথে ক্লান্তিহীন হেঁটে চলছো।


আমি মুছে ফেলতে চাই সব বিরহ
ভেঙে চুরমার করে দিতে চাই বাঁধার দেয়াল
আমি একটু মুক্ত নিঃশ্বাস নিতে চাই
আমি তোমার বুকে মাথা ঠেকে হাজার বছরের নির্ঘুমতা দূর করতে চাই
আমি তোমার ক্লান্তিহীন পথের সঙ্গী হতে চাই
হে কবি বলো নিবে তো_ঠাই দিবে তো আমায়?