রূপের দেশে (প্রথম)
রূপসী বাংলাকে দেখেছি আমি নানা রূপে শতবার,
মুগ্ধ নয়নে আজও দেখি বাংলার রূপ বারবার।
রূপে অপরূপ ষড়ঋতুর সোনার বাংলা কি বলব তাঁর!
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা রূপ যে তাঁর উপহার।
বাংলার আনাচে কানাচে ফোটে ফুল চেনা অচেনা,
বারবার দেখি তারপরও থেকে যায় রহস্য অজানা।
ভোরের আলোয় শরতের শিউলি ঝরা শিশিরে,
মুক্তার মতো রূপ ঝলমল করে দূর্বা ঘাসে সোনালী ভোরে।
নদীর বুকে পালতোলা নৌকা যেন রূপসী নারীর নাক ফুল,
নদীর দু’তীরে বাতাসে দোলে শুভ্র সতেজ কাশফুল।
বাংলার রূপ দেখেছি আমি সোনালী ধানের হেমন্ত মাঠে,
মৃদুমন্দ বাতাসে শীতের গন্ধে নবান্নের ছন্দে মেতে ওঠে।
নতুন ধানের আনন্দে কৃষকের মুখে জারিসারি গান,
শীত কুয়াশায় শীতের জড়তা ফিরে পায় প্রকৃতির ঘ্রাণ।
যে দেখেছে বাংলার রূপ, সে দ্যাখে বারবার, আমিও দেখি;
মুগ্ধ নয়নে ঊষা-গোধুলিতে আমারা বাংলার রূপ দেখি।
শিশির ভেজা শীতের সকালে খেজুর রসে উৎসবে মাতে,
শীত বুড়ি এসে জুড়ে বসে রূপের দেশে সন্ধ্যা প্রভাতে।
ওমের জন্যে জড়ো সড়ো হয়ে বসে থাকে গায়েগায়ে সব,
প্রকৃতির বুকে গাছপালার যেন মধুর মিতালি ভাব।
অতিথি পাখিরা ছোটে মুগ্ধ নয়নে রূপের দেশের খোঁজে,
খাল নদী বিলে ফুটে থাকা শাপলায় রূপে আঁখি বোজে।
আমি দেখেছি বারবার রূপসী বাংলার রূপ মুগ্ধ নয়নে,
সোনার বাংলার নদী মাঠে ঘাটে বাংলার কবিতা গানে।
                ( শেষ অংশ)
ঝরাপাতা গুলো উড়ে উড়ে কুর্ণিশ করে বাংলাকে মহাসুখে,
পাতাঝরা গাছ নির্জীব দাঁড়িয়ে থাকে বাংলার বুকে।
রূপের দেশে ঘুরে ঘুরে বেড়াই বিচিত্র রূপের ছোঁয়ায়,
সুন্দরবন থেকে কক ্রবাজার হয়ে চা বাগানের শোভায়।
শীত শেষে নবযৌবনে আসে বাংলায় ঋতুরাজ বসন্ত,
অপরূপে ফুলে ফলে জাগায় প্রকৃতিতে যে ছিল ঘুমন্ত।
কোকিলের গানে নবপ্রাণ আনে চির সবুজ বাংলাদেশে,
শিমুল পলাশে ডালে ডালে আগুন জ্বলে রূপের বেশে।
রূপের দেশের রূপ খুঁজি না, তাঁর রূপে মুগ্ধ যে আমি,
নারীর মতো শতরূপ তাঁর, বীর শহীদের মতো দামি।
গাছে গাছে ফুল, সবুজ পাতার ফাঁকে পাখির মধুর গান,
সকাল-সন্ধ্যা আনন্দ বিলায়, ক্লান্তি দূর করে জুড়ায় প্রাণ।
বৈশাখ আসে বাংলার ঘরে নব যৌবনের উত্তাপ নিয়ে,
নববর্ষকে বরণ করে রূপসী বাংলার সুমিষ্টি ফল দিয়ে।
পুরাতনকে ঠেলে ফেলে, নতুন করে জাগে হালখাতায়,
রূপের দেশের রূপসী কাহিনী ভরা ইতিহাসের পাতায়।
খরতাপে কাঁপে ধরণী তবু ঘ্রাণ ছড়ায় ঐ ফলের বাগানে,
এরই মাঝে শান্তির দূত বর্ষা আসে বাংলায় বারি বর্ষণে।
মেঘে মেঘে ঘর্ষণ বিদ্যুৎ চমকায় ময়ূরেরা পুচ্ছ নাড়ায়,
গুল্ম লতা পাতায় ভরে দেয় রূপের দেশ। সবুজে হারায়।
মাঠে মাঠে কৃষক ফসলের ক্ষেতে নিংড়ানি দেয় মমতায়,
তারই সাথে রাখালের পল্লী গানে প্রকৃতির প্রাণ জুড়ায়।
গানেরদেশ সোনারদেশ রূপেরদেশ আমাদের বাংলাদেশ,
পাহাড় পর্বতে ঘেরা, সমতল নদ-নদীতে চেরা অপরূপ বেশ।
রূপবৈচিত্রে সেরা, সৌন্ধর্য্যে ভরা কোথাও নেই তার শেষ,
সে যে আমার অপরূপ রূপের দেশ চির সবুজ বাংলাদেশ।
                                                            


   (৩১ অক্টেবর ২০০৯)