হে স্বাধীনতা দরজা খুলে দাও-
আমি আত্মহত্যা করে লাল গোধূলির ক্ষীণ আলো হয়ে
ফিরবো তোমার তিমির অন্ধকার গৃহে-
প্রজন্মের ভোরের অপেক্ষায়।


যদি আমার মৃত্যু খুশিতে তোমার গৃহে
আটচল্লিশ বছরের ধুলোয় ঢাকা ইতিহাসটা-
ডানা ঝাপটা দিয়ে উঠে,
আর আমার রক্ত-আলোয় পড়ে নেয়
বাবার সুইসাইড নোট,
পতাকাটা গলায় পেঁচিয়ে আমার আত্মহত্যা সার্থক!


এই যে তোমার গৃহের কোণটায় যে
ভাঙ্গা আলমারিটা বর্তমান মাকড়সার দখলে,
সেখানে আমার মায়ের শেষ স্মৃতিটুকু আছে-
বাবা বলেছিলো চোখ মুছতে মুছতে একদিন!
একটু খুলে দেখাবে কি হে স্বাধীনতা-
আমার মায়ের অবশিষ্ট স্মৃতিটুকু;
কাঁদছে, নাকি হাসছে?


যে সবুজ গাছটা তোমার গৃহে আজও দিব্বি ছায়া দিচ্ছে-
সেদিন আমি ভীষণ ছোট,
ওঁরা বড়কে এখানেই গুলি করে হত্যা করেছিলো,
আমার মনে আছে-
দাদা যেনো আমার দিকে তাকিয়ে বলছিলো;
আমি মরে যাচ্ছি যাই-
তুই তো ছোট স্বাধীন দেশে নিঃশ্বাস নিবি,
আমার আত্মা তোর শরীর থেকে
স্বাধীন দেশের অক্সিজেন নিবে!
জানিনা দাদা অক্সিজেন নিতে পারছে কিনা।


হে স্বাধীনতা!
আমি শিক্ষা,
আমি মেধা,
আমি বেকার,
আজ তোমার গৃহে ফিরে এসেছি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে, কিছু প্রশ্ন করতে;-
আমার যে বাবা একাত্তরে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে-
বীরের মতো মৃত্যুকে জয় করে
তোমাকে অর্জন করেছিলেন,
সে বাবা কোন দুঃখে দেশ স্বাধীনের পর
রাতের আঁধারে কাঁঠাল গাছে ঝুলে পড়েছিলো, জবাব চাই?
আমার যে মা পরপুরুষ দেখলেই-
মাথা নুইয়ে অন্য পাশ ফিরতেন,
তোমাকে অর্জন করতে সেই নিজের লজ্জাকে
বিকিয়ে দিলেন চোখ ভিজিয়ে
পাকিস্তানি সেনাদের হাতে,
এরপর ফেরেনি আর ঘরে জীবন নিয়ে!
আজ কি প্রতিদান দিয়েছো তাঁর, জবাব দাও?
আমার দাদা, যে নিজের সমস্ত যৌবনের সখ
দূরে ঠেলে রাইফেল হাতে তুলে নিয়েছিলো
তোমাকে অর্জন করতে,
যে দাদা তোমাকে ভালোবেসে
তেরোটা বুলেট বুকে নিয়ে হাসি মুখে
ঢলে পড়েছিলো নিজের হাতে লাগানো পলাশের তলায়,
আমার সে দাদার কতটুকু মূল্য চুকাতে পেরেছো,
বলো শুনি?


আজ আটচল্লিশ বছর পর মৃত্যুকে সঙ্গী করে
আমি এসেছি তোমার জবাব জানতে-
জবাব দাও হে স্বাধীনতা!
নয়তো গৃহের শেষ আলোটুকু নিভিয়ে
তোমার উদরে আগাছা হয়ে জন্ম নিয়ে
গ্রাস করবো তোমার অস্তিত্ব,
গিলে ফেলবো তোমার অর্জিত মানচিত্র,
তোমার লাল সবুজ পতাকা!