লেখাঃ আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ্‌


"কুমড়ো ফুলে-ফুলে
নুয়ে পড়েছে লতাটা,
সজনে ডাঁটায়
ভরে গেছে গাছটা
আর আমি
ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি।
খোকা তুই কবে আসবি ?
কবে ছুটি ?"


চিঠিটা তার পকেটে ছিল
ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা।


"মাগো, ওরা বলে
সবার কথা কেড়ে নেবে।
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না।
বলো, মা,
তাই কি হয় ?
তাই তো আমার দেরী হচ্ছে।
তোমার জন্য
কথার ঝুড়ি নিয়ে
তবেই না বাড়ি ফিরব।
লক্ষী মা,
রাগ কোরো না।
মাত্র তো আর কটা দিন।"


"পাগল ছেলে !"
মা পড়ে আর হাসে,
"তোর ওপরে রাগ করতে পারি !"
নারকেলের চিড়া কোটে
উড়কি ধানের মুড়কি ভাজে,
এটা-সেটা
আরও কত কি !
তার খোকা যে বাড়ি ফিরবে
ক্লান্ত খোকা।


কুমড়ো ফুল
শুকিয়ে গেছে,
ঝরে পড়েছে ডাঁটা।
পুঁই লতাটা নেতানো।


"খোকা এলি ?"
ঝাপসা চোখে মা তাকায়
উঠানে-উঠানে
যেখানে খোকার শব
শকুনিরা ব্যবচ্ছেদ করে।


এখন
মার চোখে চৈত্রের রোদ
পুড়িয়ে দেয় শকুনীদের।
তারপর
দাওয়ায় বসে
মা আবার ধান ভানে,
বিন্নি ধানের খই ভাজে,
খোকা তার
কখন আসে কখন আসে।


এখন
মার চোখে শিশির-ভোর
স্নেহের রোদে ভিটে ভরেছে।।