ঋতুচক্রের অমোঘ আবর্তনে
রঙিন বৈশাখ আসে নতুন স্বপন ফল ও
ফসলের কৃষকের ঝলঝল চোখে।
শীতের বিশুষ্ক পাতার মতো বিষণ্ন বিবর্ণ
বণিকের মুখে ফোটে তৃপ্তির বর্ণিল হাসি
বৃষ্টির সজীবতায়-যেন মরা নদীর বুকের ভিতর
ভরা যৌবনের হিল্লোল ঢেউয়ে
জলের কল্লোল বয়ে যায়।
কৃষকের হাতে যত্নে আঁকা সবুজ আলপনায়
বিধাতার হাতে সোনালি রঙের শেষ আঁচড়ে
পরিস্ফুট ফসলের মাঠে মলয়ের আঙ্গুলের
ত্রিতাল টোকায় বাজে ঝনঝন পাকা ধান
কৃষক বণিক মুটে মজুরের
দীর্ঘ প্রতীক্ষার হয় অবসান।
পাটনি মাঝির ফোসকা পড়া হাত হয় বিচঞ্চল
পরিমল উল্লাসে খেপে
পারাপারের মূল্যটা পাবে
এবার ধানের ওজনে মেপে মেপে।
প্রচণ্ড ক্ষুধায় হা করে খেরু মলাটে মোড়া
বণিকের হালখাতা-
পেটে জমা হবে বেহিসেবি লোভে
লাভের হিসেব বছর জুড়ে
জমা হবে কিছু অভাবী মানুষের দেনার ভার
তার হৃদয়ের অন্তপুরে।
বটতলা হাটখোলা জমবে মেলা হবে হইচই উৎসব
নাগরদোলার ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দে মিশে যাবে
শিশুদের অথই আনন্দ কলরব।
বিবস্ত্র বাঙালিয়ানাও পড়ে থাকতে দেখা যাবে
সভ্যতার পথে পথে অশ্লীল আনন্দ রথে।


এসবে আমার কিছুই যায় আসে না
আমি এসবের কিছুই ভাবি না।
শুধু ভাবি-পথের ধারের পাগলীটা
পোয়াতি হলো কেমন করে!
সেও কি তাহলে সাজিয়েছিলো বণিকের মতো
যৈবতি পণ্যের পসরা; যৌবন বিক্রির লাভ-লোকশান
হিসাব কি সে বোঝে; বোঝে কি সে
কামনার আহবান: অথবা না বোঝেই
কি জমা করেছে জঠরের আঙ্গিনায় পরিপুষ্ট বীজ;
নাকি বিধাতার বাগানে
প্রচণ্ড প্রতাপে প্রবেশ করে কেউ
অবিনয়ী হাতে ছিঁড়ে খেয়ে গেছে নিষিদ্ধ গন্ধম
তার পর ফেলে রেখে গেছে
বিনষ্ট সুখের উচ্ছিষ্ট ও জটিল অনুভূতি জঞ্জাল?


সভ্যতার অগ্রযাত্রায় এসব অসভ্যতা দেখে
দেখে ভেবে ভেবে বৈশাখের
ভরা আনন্দেও নির্ঘুম রাতের প্রহর
কেটে যাবে আর কতকাল, আর কতকাল...!
৩১-৩-২০১৯