আমি এক কাজের বুয়া শুদ্ধ বাংলায় গৃহকর্মী
মালিক আমাকে ডাকে শুধু বুয়া অথবা খালা
সংসারের সব কাজ আমিই করি
রান্না কাপড় ধোয়া ঘর মুছা
মাজি হাড়ি বাসন থালা।


ঘরে চার দেয়ালে বন্দি আমি
জানি না স্বাধীনতার মূল্য কত
দুবেলা অন্ন জোগাতে সইতে হয় গরম
খুন্তির স্যাঁকা, বেলনের আঘাত ঘুসি
পিঠে বয়ে বেড়াই রক্তজবার মতো ক্ষত।


ম্যামসাব যখন পার্টিতে যায় সাহেব তখন
একলা সুযোগ খুঁজে বাসায়
অষ্টাদশী যৌবনে আমার
রক্ত পিপাসুর চোখে তাকায়।
জোর করে বিছানায় টানে
পিঠের ক্ষতে বুলায় লোভাতুর হাত
উর্বসী বুকে নতুন ক্ষত করে
কাটায় উন্মাতাল কালো রাত।
পিশাচের মতো ঠোঁট থেকে শুষে নেয়
যৌবনের সমস্ত সুধা
বিবস্ত্র শরীর ব্যবচ্ছেদ করে
তবুও মিটে না শকুনের ক্ষুধা।


ভাতের জন্য ইজ্জত বেচে গতর খেটে
কোন রকমে দিন চলে
বাস্তব কত কঠিন পাষাণ নির্মম নিষ্ঠুর
গলে না অশ্রুজলে।


যারা আমার সর্বস্ব লুটে নেয়
কেড়ে নেয় বেঁচে থাকার অধিকার
তাঁরাই আবার সাজে সমাজপতি
মুখোশধারি নরাধম জানোয়ার।
সমাজের চোখে তারাই সাহেব
চেহারায় পরিপাটি ভদ্রলোক
আমি অসহায় অস্পৃশ্য অচ্ছুত
নিঃশেষ করে আমার জীবন
আবার আমাকেই রাঙায় চোখ।


আমি যে শুধু কাজের বুয়া
আমার নাই কোন অধিকার
আমার পেটে রাজ্যের ক্ষুধা
আমার যে চাই শুধু খাবার।


বাঁচার জন্য ভাতের জন্য আর কত
মুখ বুজে সব সয়ে যাওয়া
আমার কি আর কোন নাই পরিচয়
আমি কি শুধুই কাজের বুয়া?
আমি কি কারো মা নই,
নই কারো ভগিনি, জায়া?
আমাকে তোমরা একটু দয়া করো
নিষ্ঠুরতা ভুলে দেখাও অন্তরের মায়া।


বিত্ত চাই না নিত্য অনাহারে
সয়ে গেছে সব অত্যাচার
আমার সম্ভ্রম ফিরায়ে দাও শুধু
কিছুই চাই না যে আর।
আছেন কি কেউ শুনছেন কি কেহ
কাজের বুয়ার করুণ আর্তনাদ
গৃহকর্মী নির্যাতন বন্ধ করুন
বিক্ষোভে বিপ্লবে করুন সংগ্রামী প্রতিবাদ।
আমরাও মানুষ আমাদেরও আছে
নিষ্কলুষ বাঁচার অধিকার
কাজ করে খাই বাঁচিবারে চাই
চাই একটু সহানুভূতি সবার।


[বিঃদ্রঃ - "জীবনমুখী কবিতার আবৃত্তি"র জন্য।]