গ্রাম থেকে এক সহজ সরল বৃদ্ধ এলো শহরে
ঠা ঠা রোদ্দুর চান্দি পোড়া চৈত্রের মধ্য প্রহরে।
লোকে গিজ গিজ রিকশা গাড়ি রাস্তা ঘাটে ঠাসা
গন্তব্য তার ইসলামপুরে ছোট মেয়ের বাসা।
বুড়োর ঘাড়ে নারকেল জোড়া হাতে দইয়ের ভাণ্ড
বৃদ্ধ অবাক ঢাকা এসে দেখে মজার কাণ্ড।
বুড়োর গাঁয়ে খালের উপর নাই যে কোনো সেতু
রাস্তার উপর বিশাল এক ব্রীজ এটা কিসের হেতু।
গগণচুম্বী ভবন দেখে মনে মনে হাসে
গাঁয়ের কুঁড়ে ঘরটি বৃদ্ধের সজল চোখে ভাসে।


গুলিস্তানের পথে বুড়ো হেঁটে হেঁটে ভাবে
বসে যদি চা খাওয়া যায় জিরানোটাও হবে।
রাস্তার পাশে ঘুন্টি দোকান ভাঙা বেঞ্চে বসে
চায়ের অর্ডার দিলো এক কাপ লেবু আদার রসে।
চা পান শেষে দোকানীকে দিতে গিয়ে টাকা
বুঝতে পারে পকেট মারে পকেট করছে ফাঁকা।
চা দোকানীর মেজাজ গরম বলে “বেটা নির্বোধ
নারকেল একটা দিয়ে করো চায়ের মূল্য শোধ।”
আমতা আমতা করে বুড়ো নারকেল একটা দিল
লজ্জাতে লাল হয়ে বুড়ো কষ্টে বিদায় নিল।


পিছন থেকে ডেকে একজন বৃদ্ধকে শুধায়
“বলেন দেখি চাচা মিয়া যাবেন আপনি কোথায়?”
আমি বাবা এখন যাবো ঢাকার ইসলামপুর
বলো দেখি কাছে নাকি আরো অনেক দূর?”
“ওই যে বসা গলির মোড়ে একটু খানিক দূরে
তার নিকটে গেলেই আপনি যাবেন ইসলামপুরে।
গলির মোড়ে গিয়ে দেখে লাল শালুতে ঘেরা
তাবিজ পাথর বেচে এক লোক মাথাটি তার ন্যাড়া।
বলল বুড়ো “ওহে গুরু বলেন দয়া করে
কোন দিকে যাই পথ নাহি পাই যাবো ইসলামপুরে।
ন্যাড়া ওঠে খপ মারিয়া বুড়োর হাতটি ধরে
আতসী কাঁচ বুলায় হাতে চক্ষু বড় করে।
“আপনার ভাগ্যে আছে দেখি অনেক শনির বাধা
যেদিক যাবেন সেদিক আপনার লাগবে চোখে ধাঁ ধাঁ।
শনির বাধা কাটাতে হলে এই তাবিজ নেন সাথে
দয়াল বাবার আশীর্বাদে  ফল পাবেন হাতেনাতে।”
বুড়ো বলে “আমার কাছে টাকা পয়সা নাই”
“টাকা নেই না হাদিয়া দেন যাহা খুশি তাহাই।”
নারকেল হাতে দিয়ে বুড়ো কথা করলো যোগ
“চলবে মশাই?”“এতেই হবে ন্যাংটা পীরের ভোগ।”


আরেকটু দূর এগিয়ে যান বুড়ো ত্রস্ত পদে
খোদার নামটি স্মরণ করে আর না পড়ে ফাঁদে।
দেখে এবার রাস্তা বন্ধ বিশাল জনসভা।
এরই মধ্যে আসছে নিভে দিবাকরের আভা।
ভিরের মধ্যে ঠেলে ঠুলে প্যান্ডেলে যায় ঢুকে
বাধ্য হয়ে থামতে হলো উৎকণ্ঠা তার চোখে।
কান লাগিয়ে শুনতে থাকে নেতার মিষ্টি ভাষণ
ভাষণ শুনে মুগ্ধ বুড়ো বসল পেতে আসন।
এরই মধ্যে হাতে পেল বিরানির এক প্যাকেট
এ্ই তাহলে জনসভায় বেচে সবার পেট।
যাকগে ওসব রাজনীতির প্যাঁচ বুঝার দরকার নাই
মাগনা পেলে গরীব মোরা আলকাতরাও খাই।


নেতার ভাষণ ফুরায় না তো আগুন ঝরা বুলি
“ভয় করি না আসুক যত গ্রেনেড বোমা গুলি।
জীবন দিয়ে রাখতে হবে উন্নয়নের ধারা
লুটে পুটে খাচ্ছে সবই ক্ষমতাতে যারা।
ন্যায় নীতি আর আইনের শাসন নেই যে তাদের কাছে
দেশের সম্পদ খাচ্ছে লুটে রাঘব বোয়াল মাছে।”
বুড়ো ভাবে কথা সঠিক সব যখন তার জানা
এই লোকই তো দিতে পারে আমার ঠিকানা।
হঠাৎ বুড়ো দৌড়ে গিয়ে মঞ্চ ওঠে যায়
পাশে থাকা পাতি নেতা বুড়োকে থামায়।
বুড়োর কথা পাতি নেতা বলে নেতার কানে
হেচকা টানে বুড়ো আসে নেতার সন্মুখ পানে।
বজ্রকণ্ঠে নেতা হাঁকে “ভাইয়েরা আমার,
দেখুন কত নিষ্ঠুর জালিম বর্তমান সরকার।
লোকটি যাবে ইসলামপুরে দেয় না তাকে যেতে
সরকারি লোক দিচ্ছে বাধা মানুষ চলার পথে।
স্বৈর শাসক নিচ্ছে কেড়ে মৌলিক অধিকার
এই সরকারকে ক্ষমতাতে রাখা যায় না আর।”
মুহুর্মুহু স্লোগান ওঠে “হটাও স্বৈরাচার
জনগণকে দাও ফিরিয়ে ন্যায্য অধিকার।”


বুড়ো ভাবে একি বিপদ মহা গণ্ডগোল
নেতার কাছে আসাইটাই তো আমার মহা ভুল।
পড়িমরি করে বুড়ো পালায় মঞ্চ ছেড়ে
নেতার মুখে মিথ্যা ভাষণ আসে কেমন করে।
হাঁপায় বুড়ো ঘামছে বেজায় থমকে দাঁড়ায় পথে
সজোরে এক ধাক্কা লাগে পথচারীর সাথে।
ধমক মারে, “অন্ধ নাকি,দেখতে পাও না চাচা?”
“বলছি পরে জল দে একটু আমারে তুই বাঁচা।”
“কী কন চাচা, আমি থাকতে আপনার কিসে ভয়
আমি আপনার ছেলের মতো বাঁচাবো তো নিশ্চয়।”
রিকশা ডেকে নিল তারে প্রাইভেট হাসপাতাল
সরল বুড়ো বুঝেনি সে রোগী ধরার দালাল।
হাসপাতালে নিয়ে বলে এখানটাতে শো’ন
ডাক্তার এসে দিবে আপনায় বাঁচার ইনজেকশন।
ইনজেকশনের কথা শুনে কেঁদে বলে বুড়ো
“ইনজেকশনের দরকার নাই বাপ যাবো আমায় ছাড়ো।”
“ছেড়ে দিবো রিকশা ভাড়া ডাক্তারের ফি দেন”
বুড়ো চেচায় “এখানে তুই আনলি আমায় ক্যান?”
টানাটানি দস্তাদস্তি হুলুস্থুল এক কাণ্ড
পথের মাঝে ভেঙে ছড়ায় বুড়োর দধির ভাণ্ড।


নিঃস্ব বুড়োর দৃশ্য দেখে কৌতুহলি লোকে
ক্যান যে এলাম শহরেতে বিড়বিড়িয়ে বকে।
বৃদ্ধের মনে রইল জমে মস্ত বড় কষ্ট
স্বার্থের টানে দিনে দিনে মানুষ হচ্ছে নষ্ট।
এর পিছনে কারণ খুঁজে  বৃদ্ধ অবাক হয়ে
সভ্য মানুষ অসভ্য আজ নৈতিকতার ক্ষয়ে।
২৭-১১-২০১৭
ছন্দ: স্বরবৃত্ত
পর্ব বিভাজন: ৪/৪/৪/২, ৪/৪/৪/১ মাত্রা।