আজ তিন দিন হলো-
কপর্দকশূন‌্য কার্তিকের মন বেজায় খারাপ;
গুমোট আঁধারে ছেয়ে আছে চারপাশ,
বাঁধ ভাঙ্গা বেদনায় নীল;
মাঝে মধ‌্যে উন্মাদের মতো ডুকরে কেঁদে ওঠছে,
অঝর ধারায় চোখে ঝরছে অশ্রুবারী।


মন ভালো হওয়ার লক্ষণ নেই।
কেননা মরা কার্তিকের প্রেম ভুলে
অঘ্রাণ কন‌্যা শিশির চলে যাচ্ছে
হেমন্তের হাত ধরে
সম্পদের প্রাচুর্যে ভরা সুদর্শন হেমন্ত
তার সাথেই শিশিরের শুভ বিবাহ।
এখন চলছে গায়ে হলুদ পর্ব;
শিশিরের সারা শরীরে মেখেছে
কাঁচা হলুদ আর চন্দনের রঙ
হলুদ সরিসার মালা গলায় ও মাথায়
ঝিঙে ফুলের দুল পরেছে কানে
গায়ে হলুদের পিঁড়িতে বসে
সকালের সোনা রোদে হাসে ঝলমল।
কৃষাণ কৃষাণী গান গেয়ে
মাটির বুকে পুঁতে দেয় স্বপ্নবীজ;
সারা মাঠ জুড়ে আঁকে হলুদ, সবুজ
লাল রঙের শৈল্পিক আলপনা;
লাউ, সীম আর ঝিঙে লতায়
নতুন করে সাজিয়েছে আঙিনা;
খেজুরের রসে ডুবা পিঠা পায়েশে
বর-বধূ বরণের লক্ষ‌্যে খেজুর গাছের
গলায় ঝুলাতে প্রস্তুত মাটির হাড়ি।
মহাসমারোহে চলছে হেমন্ত-শিশিরের
বিবাহের ঘনঘটা; সব আয়োজন সমাপ্ত।
অপেক্ষা শুধু শিশির পিতা অঘ্রাণের।
অঘ্রাণ আসামাত্রই নবান্নের উৎসবে
মহা ধুমধামে শিশিরের বিয়ে।


আর তাই বিষন্ন বিমুঢ় কার্তিকের
চোখের জলে ডুবে ফসলের মাঠ;
জলের শব্দে ভেসে যায় কার্তিকের সুখ
সেই সাথে ভেসে যায় কৃষাণীর স্বপ্ন।
লালশাক কলাইয়ের বাড়ন্ত শিশু
গেরুজলে ডুবে কাটে ডুবসাঁতার।


শিশিরের বিয়ে জড়ায়ে গায়
হিরা জহরত পান্না,
তার বিরহে কার্তিকের এই অভিমানী কান্না।


২৮-১০-২০১৬