(কবিতাটি এক তরুণ মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর নির্যাতিতা স্ত্রীর গল্পকে কল্পনার আশ্রয়ে রচিত।)


তোমার শরীর ছিল আমার কাছে
এক বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ
আগাগোড়া সমান মসৃণ
তাজা গোলাপের আভায় অকুণ্ঠ প্রকাশমান।
মধ্যখানে সামান্য উঁচুনিচু ডানে ও বায়ে
প্রান্ত ছুঁয়ে ছোট্ট নালা পৌঁছে গেছে কেন্দ্রস্থলে
শস্য ভাণ্ডারে, যেথায় কৃষক বেঁধে রাখে
নতুন ধানের গোলা, জমা করে রাখে
নতুন ফসলের বীজ, অনাগত ভবিষ্যৎ যেখানে
বেড়ে ওঠে, ফসলের বিশুদ্ধ পাত্র হয় ভরপুর।


এই মাঠে আমি কত করেছি খেলা
গড়াগড়ি গেছি কত কোমল ঘাসের বুকে
হঠাৎ জেগে ওঠা বাড়ন্ত ঘাসের ডগা ধরে
কত পেয়েছি কোমলতার স্বাদ,
কখনও ভূতলে নাক গলিয়ে নিয়েছি মাটির ঘ্রাণ
কখনও শরীরে ধূলাবালি মেখে করেছি গঙ্গাস্নান।
কখনও নালায় আছাড় খেয়েছি পিচ্ছিল কাঁদাজলে
কখনও বুনেছি ফসলের বীজ অসময়ে মৌসুম ভুলে।
সেই মাঠের ধূলাবালি কাঁদা
মেখেছি গায়ে পরম মমতায়
কখনও ছড়ায়ে দিয়েছি বীজ অংকুরের আশায়।
কখনওবা ঘাসের ঢিবিতে মাথা রেখে
ঘুমিয়ে পড়েছি নিঃশব্দ শান্তিময়
আবার ওঠেছি জেগে আলতো ঘুমের অতল থেকে
নরম ঠাণ্ডা করা দেহের প্রান্তসীমায়।
সেই মাঠে আমি একাই চড়েছি
একাই করেছি চাষ
সেই মাঠে আমি শান্তি নীড় গড়ে
একাই করেছি বসবাস।


হঠাৎ একদিন সেই মাঠে দানবেরা দিল হানা
নখের আঁচরে নগ্ন মাঠের বুক চিরে
করে দিল ফানাফানা।
ঝাঁকে ঝাঁকে ঊড়ে এলো পাকিস্তানী শকুন
মাঠের মাটিতে ছড়িয়ে দিল অজস্র নিষিদ্ধ ভ্রুণ;
দাউ দাউ জ্বলে মাঠের ফসলে নৈরাজ্যের আগুন
মুহূর্তের ঝলকানিতে ধ্বংসের উল্লাস
অগ্নি উৎসবের বীভৎসতায় পুড়ে সবকিছু ছারখার।
সেই থেকে উর্বর ভূমি হয়েছে ঊষর
আমার সেই মাঠে এখন আর
ফুল ও ফসলের হাসি নেই
পাখিদের কলরব নেই
কেবল শ্বেত চাদরে ঢাকা এক
ধূসর বিরান ভুমি
সেখানে ফসল ফলে না আর।
সেই মাঠ আজ সাক্ষী নিপীড়নের
সেই মাঠ আজ সাক্ষী স্বাধীনতার।
যে মাঠের নাম ছিল প্রিয়সী অঙ্গনা
সেই মাঠের নাম হয়েছে আজ বীরাঙ্গনা।