স্টেশনের নাম শমশের নগর
কমলগঞ্জ উপজেলা।
ট্রেনের নাম উদয়ন এক্সপ্রেস।
স্টেশনে আসার ঘোষিত সময়
ভোর পাঁচ ঘটিকা।
গন্তব‌্য সিলেট।
উদ্দেশ‌্য মাজার জিয়ারত
হয়রত শাহজালাল ও শাহ পরাণের
পূণ‌্য ভূমি স্বচক্ষে দর্শন।


পৌষের হিম শীতল শীতের রাত
পাঁচটা বাজার পূর্বেই স্টেশনে হাজির
দশ বারো জন যাত্রী বাদে
ঘুম ভাঙ্গেনি কারো।
সুনসান নিরবতা-
কুলিদের ডাকাডাকি নেই
হাকারদের চিৎকার চেচামেচি নেই
মাথার উপর দিয়ে ঊড়ে যাওয়া
এক ঝাক পরিযায়ী পাখির অদ্ভুত আওয়াজ
ঝম ঝম ঝম।


শুভ‌্র কুয়াশা ঘিরে রেখেছে চারদিক
ঝাপসা আলোয় সুরম‌্য মসজিদের মিনার দেখা যায়
ফজরের আযান তখনও ধ্বনিত হয়নি
অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান যাত্রী।
স্টেশনের এক কোণায় লেপ কাঁথাহীন
শীতে কাতর ছিন্নমূল এক কিশোরী
ময়লা ছেড়া বসন, হাত পা গুটিয়ে
নিয়ন আলোয় আবেশি ঘুমের ঘোরে আচ্ছন্ন।
কী নিশ্চিন্ত, নির্লিপ্ত প্রশান্তির ঘুম!
এমন প্রশান্তির ঘুম অনেকেই ঘুমাতে পারে না
যাদের অনেক আছে।
এলার্ম দিয়ে রাখা সেল ফোন
ঢং ঢং শব্দে জানিয়ে দিলো
পাঁচটা বাজার সময়।
ট্রেনের দেখা নেই
স্টেশন মাস্টারের হদিস নেই
স্টেশন মাস্টারের কক্ষে উঁকি দিয়ে
চক্ষু কপালে উঠে।
উদয়ন এক্সপ্রেস স্টেশনে আসতে বিলম্বের নোটিশ
কম্পিউটার মনিটরে ভাসছে রঙিন অক্ষরে
ট্রেন স্টেশনে আসার সম্ভাব‌্য সময়
সকাল সাড়ে সাতটা থেকে আটটা।
বিলম্বের কারণ উল্লেখ নেই
দুঃখ প্রকাশের ভব‌্যতা নেই
শুধু বিলম্বের সময় স্ক্রীনে সেঁটে দিয়ে
লাপাত্তা মাস্টার।


তিন ঘন্টার অস্থির অপেক্ষা।
কেননা ট্রেনের টিকেট আগের দিনই কাটা হয়ে গেছে
বিকল্প পথে সহজ কোন উপায়ও নেই,
বসে বসে মশা তাড়ানো ছাড়া কোন কাজও নেই।
তিরিশ বছর আগে প্রথম যেদিন ট্রেনযাত্রা করেছি
সেদিন শুনেছি ট্রেনের জন‌্য অনিশ্চিত সময়ের
অপেক্ষার প্রবাদ- ‘ন’টার ট্রেন ক’টায় আসে’।
একবিংশ শতাব্দির ডিজিটাল বাংলাদেশ
শেখ হাসিনার শ্রমে ও ঘামে দুর্বার গতিতে
সামনে এগিয়ে চলা দেশে
ট্রেনের শম্বুক-গতি!
ভোর পাঁচটার ট্রেন সকাল আটটায়!
ছোট ভাই সালাম ও তার প্রণয় সাথী তানিয়ার
বড় ভাইয়ের প্রতি দেবতুল‌্য সমাদর,
স্ত্রী সন্তানের প্রথম ট্রেনে চড়ার আনন্দ,
অপেক্ষার যন্ত্রণা থেকে কিছুটা মুক্তি দিলেও
মিলাতে পারিনি সময়ের হিসেব।
মাত্র কদিন আগেই ক্ষমতাসীন দলের
বর্ণাঢ‌্য কাউন্সিলের  আশাজাগানিয়া স্লোগান-
“উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ
এগিয়ে চলেছে দুর্বার
এখন সময় বাংলাদেশের
মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার।”


ভাবনায় সময় কেটে যায়
পূর্ব দিগন্তে কুয়াশার ফাঁক গলে
অংশুমালীর অভ্রভেদী অভ‌্যুদয়,
প্রাত‌্যহিক নিয়মে জনাকীর্ণ স্টেশনে
প্রকৃতির হিসেবী ডাক
নিম্নাঙ্গে বেরসিক কাতুকুতু
ওয়েটিং রুম তালাবদ্ধ
সাড়া দেবার সুযোগ নেই
ওয়াশ রুমের চাবি নেই
ট্রেন এবং ট্রেনের কুশীলবদের আগমনে
রুদ্ধশ্বাস অস্থির অপেক্ষা।
অবশেষে ট্রেন আসে সকাল আটটায়।
মনের কোণে প্রশ্ন থেকে যায়-
যে কোন গন্তব‌্যে ট্রেনের টিকেটের হাহাকার
অথচ বছর শেষে লোকসানের হিসাব
টাকার অংকে হাজার কোটি ছাড়িয়ে যায়
এ দায় কার?
অযোগ‌্য, অদক্ষ, অসাধু কতিপয় ব‌্যক্তির
অদৃশ‌্য রাহুগ্রাস হতে কবে মুক্তি পাবে
এদেশের জনগণ?


২০-১২-২০১৬