শ্রাবনের গভীর রাতে যখন বাজ পড়তো অনবরত
ভয়ে গুটিসুটি হয়ে তোমার কূলে মুখ লোকাতাম; বাবা।
মনে আছে;  অপারেশন ক্লিন হার্টের রাতে সারা শহর মিলিটারিতে ভরে গেলো?
আমরা যখন সবাই ভীত-সন্ত্রস্ত্র
বাড়িতে রেড হয়েছে বলে!


অভয় দিলে তুমি।
কি সাহসের সাথেই না তুমি কথা বলেছিলে ওদের সাথে।


তোমার সততা , সাহস সব সময় অনুপ্রেরনা জুগিয়েছে আমাদের।
সমস্যার শেষ ঠিকানা যেনো তুমি।
প্রিয় বাবা,
সব সমাধান তোমার-ই কাছে।
যতো প্রশ্ন , যতো আবদার সব জানি; তোমাতেই  আছে।


সেই তুমি-ই আজ অনাথ, অবুঝ, জীর্ন হয়ে গেলে?
না ; তুমি তা নও কখনো।


বহুমুত্র রোগ তোমাকে গিলে ধরেছে!
প্রথম যেদিন তোমায় হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলাম
যেদিন প্রথম তোমায় কাদতে দেখেছিলাম
সেদিন, আমার মতো অসহায় কেও ছিলো না এ পৃথিবীতে ।


সব সাহস; ভরসা’র যায়গা যেনো বিলীন হয়ে যাচ্ছিলো।
একে একে এতোগুলো অস্ত্রোপাচার, প্রতিদিন ইন্সুলিন নামের সূই এর গুতো তোমাকে অবুঝ বানিয়ে দিচ্ছিলো প্রতিদিন ।


একটু একটু করে বড় হতে থাকি, বুঝতে থাকি, মানতে থাকি সব ।


কিন্তু হঠাৎ; তোমার দু চোখ অচল হয়ে যাওয়ার খবরে স্তব্ধ হয়ে যাই আমি।
ছুটে যাই বাড়িতে।


না গেলেই  ভালো হতো!
তোমাকে এতো অসহায়, পর নির্ভর দেখে অসহ্য যন্ত্রনা বোধ হয়েছিলো আমার।


চোখ বন্ধ করে তোমার কষ্ট অনুধাবন করতেই
চোখ দিয়ে অঝরে জল ঝরেছিলো সেদিন।
প্রতিদিন প্রতিক্ষন তোমায় ভেবে মন খারাপ হয় বাবা।
অসহ্য কষ্টে , অর্থাভাবে ভেঙ্গে পড়ি রোজ।


কিন্তু তোমার অনুপ্রেরনা, নির্দেশনা নতুন করে বাচতে শেখায় আমাকে।
নতুন স্বপ্ন দেখায়, নতুন গান শোনায়, নতুন ভোর আনে জীবনে।
কখনো তোমায় জড়িয়ে ধরে বলা হয়নি,
‘প্রিয় বাবা, তুমি আমার প্রথম নায়ক , প্রথম অনুকরন
তোমায় পেয়েই ধন্য আমি ,ধন্য আমার জীবন’