অনেক বাক্যইত ছিল তোমার কাছে পাওনা,
না পাওয়ার অনেক কিছুর মতই।
রাত বেড়ে হয় সকাল, সকাল বেড়ে রাত।
অধীর অপেক্ষায় ফেটে পড়ে চাওয়া পাওয়ার
মৃত মার্বেলে গাঁথা স্বপ্নরাজি।
মানুষের খ্যাপা ধমনী বেয়ে
রক্তের পাড় মাতাল সৈনিকেরা নেমে আসে।
মুরলীধারি তার বাঁশির ফুটোতে আংগুল রেখে
দাঁড়িয়ে থাকে অপেক্ষার গহীন বনে।
ভাংগা দালানের ফোকরে পা রেখে
দেদিপ্যমান খাড়া হয়ে থাকে বেজন্ম বট গাছ।
কত ত বাক্য ছিল তোমার পেটের আঁতুড়ে,
তবুও নির্বাক তুমি সবাক ছবির চিত্র পটিয়সী হয়ে।


অবুলন্দ নসীব আমার!
গুলমোহর গন্ধকিনী হয়ে সেই তুমি এখনও বাক্যহীনা।
তোমাকে  নির্জণ শোনার আশায়,
সময় এখন ভীরু কাঠবিড়ালীর ন্যায়
সটান লুকিয়ে পড়েছে গাছের নিশ্চুপ অলিন্দে।
মূরলীধারির বাঁশির মুর্চ্ছণায় মুখরিত হয়নি এখনও
সেই তল্লাট কাঁপানো সুর।
ভাংগা দালানের ফোকরে দাঁড়িয়ে থাকা সেই বট গাছ
আজও জেগে আছে তোমাকে শোনার বিধুর প্রতিক্ষায়।
তোমার পেলব ওষ্ঠের কথামালায় যামিনীর দামিনী প্রভা
নিঃশরিত হয়নি যে আজও।
মায়া সিন্ধুর হৃৎ কাঁপানো অগাধ জলে
তোমার বাক্যের জলতরংগরা এখনও যে রয়ে গেছে স্নানরতা।


উৎকট বেতাগি কর্ণে আজও তাই নিরবধি দন্ডায়মান শ্রোতা
তোমার সুমিহিন বাক্যকোষ উন্মোচনের অপেক্ষায়।
বিদগদ্ধ চিত্র পটে দাঁড়িয়ে রবে তুমি আর কত কাল,
হে বাক্যহীনা ?
শ্রোবন পাড়ের সেলুলায়িত কোষে
তোমার বাক্যগুচ্ছ যে ধরে রাখতে চাই আমি কর্ন কুহরের মৌন পটে।


তোমার কেশদাম হতে জল বিন্দুর মুক্তাকনা ঝরে ঝরে
শব্দ পাতন হবে সেত ছিল বাসনা, হে বাক্য বিবশিনী।
মরিচিকার মরণ রুদ্র তাপে
সে যে বিদায় নিয়েছে কত কাল।
কত মাহেন্দ্র ক্ষণ এল, কত যে বিদগদ্ধ ক্ষণ গেল চলে;
হে বাক্যহীনা, নিঃসাড় বিদগদ্ধ বলয় যে আজ মরিচিকায় ভাসে।
তোমার প্রতিচ্ছবি এখন প্রতিবিম্ব হয়ে লোবান সাগরে ছোটে
নিঃশব্দ নিশাচরী হয়ে।


কত যে কোকিালার গান শোনা হোল,
কত যে রাতের উদ্দাম বাতাসের হু হু করা ডাক  ছুঁয়ে গেল বুক।
কত যে দেউড়িতে রাতের অফোটা বাক্য চয়নিকা
হয়ে গেল মহা কাব্যের অঝর লিখন।
তবুও হে মহাদপি বাক্যহীনা,
তোমাকে শোনা হলনা কোন অসমপিকা ক্রিয়ার অসাধারণ মন্ত্রে।


ফিরে তাকাই আগমনী বসন্তের গলিভাগে,
হয়ত তোমার মৌতাত হতে মৌটুসিরা এনে দেবে বাক্য গুঞ্জন, এই ভেবে।
হে নীপাংগী মোহনীয়া,
তোমাতেই যে বিবশ রয়ে গেছ তুমি কোন বাক্যহীনা বিবর ভূবনে।
রাতের বাতাসে জমে উঠে উচাটন শব্দের মাতাল মেলা,
কৌমুদী কৌলীন্যে অবগাহন করে হয় মুখর।
সারঙ্গীর বেহাগ তালে মর্মরিত হয়
আলম্বিত দেহের সব স্বরতন্ত্র।
কবিয়ালের নিখাদ বাক্য বিন্যাস, পাঁচালিতে আনে ছন্দ;
তবুও বাক্য ব্যায়ের প্রতিযোগিনী হয়ে রইবে তুমি আর কত কাল?


আনন্দ সুধার নিখাদ নন্দিতারা আজ আাঁচল মোচড়ায়,
সাগর জলের তড়পানো উল্লোলরাজি ঢেউয়ের বিরাগ শাসনে কেবলি আছড়ায়।
আজন্ম পিয়াসি সমুদ্র তটে এসে জলের শব্দেরা হয় খান খান,
গানের পাখিরা হারিয়ে যায় নৈশব্দের চরাচরে।
হে বাক্য বিবাগী,
তোমার স্বর নালীর চেরাবালিতে বাক্য বিহঙ্গীরা যে কেবলি আটকিয়ে যায় বার বার।
নিরন্তর বাক্য সংবরণের ব্যাধি মন্ত্রে তুসি আজ হয়েছ এতই মহা যোগিনী,
তোমার স্বরদর্পিণী প্রাণ পদ্যরাও এখন হয়ে গেছে মৃত বাগানের মালি।  


একে একে সব শব্দের কৃচ্ছ কামিনীরা
হয়েছে এখন বিদায়।
শাল পিয়ালের পাতা ঝরা গান
এখন আর তোলেনা হাহাকার।
বিদায় হে সুর বিবাগী মন্দিরা,
নমঃ নমঃ নমঃ, বিদায় নমস্কার।


কোন এক ঝড়ের রাত কিংবা প্রাতের কোন স্নিগদ্ধ কোলাহল
তোমার ওষ্ঠ যুগলে আনে যদি কোন স্ববাক পংক্তিমালা,
কিংকরি সুরের মূর্ছনায় যদি খুলে যায় তোমার সুলোহিত ওষ্ঠাধার;
বলে দিও-
শ্রী চরণেষু, দিলাম তোমায় বাক্যহীনার বাক্য বিলাস।
তোমার জন্য কত যে অনন্য বাক্যের অনুদ্গম ধ্বনি,
কত যে বসন্তের কথা মালার ফুটন্ত মল্লিকারা
রয়ে গেছে নীরব সমাধির সফেদ মর্মর সমাধি তলে ;
চৌচির বেদনাহত কোন কূহেলিকা রাতে কিংবা স্মৃতি বিদ্ধস্ত কোন প্রাতে  
শুনে নিও তুমি তা নির্বাক প্রকৃতিকে ডেকে।
                                                          
                                                   বিশুদ্ধ প্রেম-১