হৃদয়ের এক বনিক পাড়ায়
ক্ষণিকের তরে
সেই হীরক ব্যাবসায়িনীর সাথে
হয়েছিল দেখা আমার।
দর দাম, বেচা কেনা, হাঁক ডাক
কিছুই হয়নি সেই ক্ষণে,
সেই ব্যাবসায়িনীর সাথে।
শুধু হৃদয়ের যে সওদাগর পাড়ায়
হয়েছিল তার পদার্পণ,
আর যেসব বিপনি বিতানে
হয়েছিল তার সুশ্রী পদ যুগলের
চিহ্ন সমর্পণ,
সেখানে কোন এক অপরাজিতার
পাপড়ি হয়েছিল বিস্তার।
আর জনান্তিকে জৈব জ্বালানীর
এক প্রদ্বীপ উঠেছিল জ্বলে হৃদয়ে আমার,
সেই অপরাজিতাকে দেখবার।


সময়ের ঘানি টেনে টেনে
ঘামে ভিজে
যে যুগের হয়েছে তিরোধান,
মকর ক্রান্তির রৌদ্রে পুড়ে
শূন্য দ্রাঘিমাংশে
হয়েছিল যার সর্ব দাহন,
সিরামিকের দেয়াল ভেংগে
যে নিশ্চিহ্ন দালানের
হয়েছিল অবসান,
পানিপথের গিরীখাতে
যে মোঘল যুদ্ধের
হয়েছিল সুদূর সমাপন,
আর সাগরের বেলাভূমে
যে জলোচ্ছবির
হয়েছিল নিরন্তর অপসারণ,
তাকে আবার কেন ডেকে এনে
হৃদয়ের জলচৌকিতে
আসন পেতে দেয়া ?


তবে কী স্মৃতির আড়ালে থাকে
স্মৃতির দেয়াল ?
আর মনের আড়ালে থাকে
মনের খেয়াল ?


কী জানি হয়ত এসব
হীরক ব্যাবসায়িনীরা
কখনও আসে
কখনও বা যায়,
তারপর তমালের পথে হেঁটে হেঁটে
তমালিকা হয়ে যায়,
কোন এক অজানা পথে।
শুধু পড়ে থাকে তাদের ছায়া
আর আঁধারে গোপনে
হাঁটে তাদের কায়া,
তারপর বিলাসী পক্ষিনীর ন্যায়
ঘোরে কিংবা বেঘোরে
স্বপ্নের মত
ভেসে আসে স্মৃতির পাতায়,
অতঃপর ছুটে বেড়ায়
বিবস্ত্র স্মৃতিদের নিয়ে
উদ্ভট উলংগ অবয়বে
দাঁড় করানোর প্রয়াশে।
হীরকের চৌর্য্যবৃত্তির মতই
হৃদয় খনির ঠিক কেন্দ্র বিন্দু হতে
তুলে নিয়ে যায় সব কিছু
এসব হীরক ব্যাবসায়িনী
পাকা জুয়াড়ির মত।


স্মৃতির খাতার এসব এলমেলো পাতা
মুড়ে রাখলেও
তাতে পড়েনা কোন ভাঁজ,
এবং পড়েনা তাতে কোন দাগ।
বরং নিভাজ তরূণীর মত হয়
আরো উদ্ভাসিত
আরো উদ্দীপ্ত।


চিত্তের আমিত্বপনা
কিংবা অনুভবের দেওলেপনা,
সুরের স্বেচ্ছাপনা
কিংবা স্বরভংগের পিড়াদায়ক বিড়ম্বনা
যেমন নিছক দোদুল্যমান
মোম শিখার মত
সদা টলটলয়মান,
তেমনি কোন হীরক ব্যাবসায়িনী
অথবা মনি-মানিক্যের কোন জহুরিণীকে
মনের কচড়ায় এঁটে রাখা,
স্প্রিং এর গদিতে তড়পানো
কোন বস্তুকে ধরে রাখার মতই জটিল।
ঠিক যেমন জটিল
বাতাসে সুড়সুড়ি খাওয়া
পদ্ম পাতার উপর
শিশির বিন্দুকে ধরে রাখা।


তবুও, ফোঁড়ন কাটা সূচের সাথে
রেশমি সূতারা যেমন চলে আসে,
স্বচ্ছ কাঁচের পাত্রে
চকচকে পারদের সাথে
যেমন ঢুকে পড়তে চায়
তেল নামক তৈলাক্ত পদার্থটি,
বুকের লোহিত কনাদের সাথে
আঁতাত কোরে
যেমন থেকে যায় শ্বেত কনিকারা,
বৈধব্যের দুঃখের ব্যাকরণেও
যেমন থেকে যায়
ব্যাতিহারে বহুব্রিহী নামক
সুখের কিছু সংগা,
উল্কার সাথেও যেমন
ছুটে যেতে দেখা যায়
শুভ্র রেখার উল্কা পুচ্ছ,
আর সুগন্ধি খাবার রান্নার সাথে
যেমন থেকে যায় কেওড়া জলের
নিবিড় সখ্যতা,
হয়ত হৃদয় গলির পিচ্ছিল পথে
গড়াগড়ি খেয়ে
কোন এক নিভৃত রাতে
কিংবা কোন এক নীরব প্রাতে
মনের দুয়ারে
মূর্তিমান হয়ে চলে আসে
এই সব হীরক ব্যাবসায়িনীদের
আবক্ষ স্মৃতি।


স্বেচ্ছাচারী কোন ব্যাভিচারিণীকে
ব্যাভিচারের মৌলিক জ্ঞান দান,
আর বায়ান্ন গলির তেরপান্ন মোড়ে
কোন সাধুকে খুঁজতে গিয়ে আত্মহনন-
সে একই কথা।
দজলার পানিতে নেমে
এই মহুর্তে ইয়াজিদকে খোঁজা,
আর হীরক ব্যাবসায়িনীর মনোরাজ্যে নেমে
রাম রাজত্বের ভারত মাতাকে খোঁজা-
সেও তো একই প্রয়াশ।
নিরেট পাথরে মাথা কুটে
পাথরের কাছে জল চাওয়া,
আর পাপাচারী শয়তানের কাছে
স্বর্গের পথ জানতে চাওয়া-
সেটা কিন্তু ঐ একই কথা।
হীরক ব্যাবসায়িনীকে হৃদয় বানিজ্য
না করার অমন্ত্রন,
আর প্রেম পূজারিণীকে
প্রেম বিসর্জণের নিমন্ত্রন,
সেটাও নিছক একই সমীকরণ।


পাতাদের গায়ে পিঠে
রোদ্দুর খায় চুমু,
বৃষ্টির ভরা গায়ে বাতাসেরা
চুলকায় দেহ,
মেঘলা আকাশে
চাঁদ আর চাঁদনীর চলে লুকোচুরি,
আর কৃষ্ণ রাত্রির গায়ে
আলো জ্বেলে রুপ দেখে জোনাকী।
ঐ যে সেই হীরক ব্যাবসায়িনী,
সেও ছুটে আসে আমার স্মৃতির পাটাতনে
ডোরাকাটা বিড়ালীর মখমল পায়ে
নিঃসংগ সংগোপনে।
তাকে না পারি আমি ছূঁতে,
না পারি দূরে সরাতে।
হৃদয় গলির অন্দর মোড়ে
যে স্মৃতির মিনার পড়েছে ধ্বসে
আদিম কালের সেই তামাদি যুগে,
সেখানে সেই হীরক ব্যাবসায়িনীর
অনিকেত আগমন,
আমার কাছে মনে হয়-
মানবের কর্তিত ঠোঁটে ভালবেসে
মধু চুম্বনের মতই
প্রবঞ্চনার বেহায়া বিলাস মাত্র।


শুদ্ধ প্রেম-৮