সৎ মায়ের ছিল দু’টি মেয়ে।
একটি স্বামির মৃত বৌয়ের, অন্যটি নিজের।
একে একে মেয়ে দু’টি কৈশর পেরিয়ে যৌবনে দিল পা।
সৎ মায়ের বিনষ্ট হলো ঘুম।
নিজের মেয়েটি তেরো, সে এখন মাথার উপর পোয়া বারো,
তার উপর সতীনের মেয়েটি হতে চললো পনের।
মেয়ে দু’টি স্কুলে যায় এক সাথে, রাতে ঘুমায় এক বিছানাতে।
কখনও দু’জনের চলে অভিমান, কখনও ওড়ে বিগ্রহের কেতন।
গ্রামের আম, জাম, নিম, তেঁতুল গাছের জড়াজড়ির মতই
কাটে তাদের জীবন।
হঠাৎ এক দিন, সৎ মায়ের খুললো মস্তিষ্ক, বুদ্ধি দেখা দিল ক্ষীণ।
কী হবে সৎ মেয়েকে ঘরে পুষে।
ধান বীজ হতে গজায় ধান, টাকার পত্তনি খাটিয়ে আসে টাকা,
আর এই মেয়েটিকে পুষে লাভের অংক শূন্য, সে কি এতই বোকা!
দিল সে মেয়েটিকে দালালের হাতে তুলে।
সতীনের মেয়ের পাটলো চুক, স্বস্তিতে ভরলো তার বুক।
নিজের মেয়েটি একা একা স্কুলে যায়।
মেয়েটির বুকে বনের মায়া সাত সমুদ্রে ধায়, তবুও বোনের দেখা নাই।
কিছু দিন হতে, দ্যাখে সে তার পিছে, গ্রামের বখাটে এক
নিতেছে পিছু, ভয়ে তার বুক কাঁপে, পাছে ঘটে যায় যদি কিছু।
এক বৃষ্টি ভেজা দিনে, শূন্য রাস্তায়, বৃষ্টি ঝরার ক্ষণে
সেই বখাটে নিল সেই মেয়েটিকে পাশের পাট ক্ষেতে।
তারপর, আকাশে আকাশ হলো লীন, বাতাসে বাতাস হলো ভারী,
মেয়েটির ক্রন্দন ক্রমে ক্রমে হয়ে গেল ক্ষীণ।
হায় তরুনী! তার জীবনের যত ছিল জয়,
আজ তার সবই হয়ে গেল ক্ষয়।
এল ফিরে সে বাড়ি, রাত্রি আঁধারে দিল গলায় দড়ি,
তারপর থেমে গেল তার জীবনের ঘড়ি।
রেখে যাওয়া তার চিঠি হতে, জানা গেল কেন সে রাতে করলো আত্ম হনন।
বললো সবাই সৎ মাকে, তোমার সৎ মেয়েটি হারালো কোথায়।
থাকলে দু’জনে এক সাথে, মেয়েটি কি তোমার মরত এমন বিপাকে?


হ-য-ব-র-ল-২৫