ওদিকে তখন জমিদার সরফরাজ খাঁ এর দরবারেও খুশির জোয়ার বইতে শুরু করেছে। সেখানে সরফরাজ খাঁ তাঁর নায়েব দোস্তগীরকে ডেকে বললেনঃ
জমিদার ঃকিহে দোস্তগীর কেন এত
সরফরাজ ল্যাংড়া ঘোড়ার মত,
খাঁ হুক্কা টেনে খুশি মনে
সময় করছ গত।
ফর্দ বানাও, বিয়ের ফর্দ
পাকুড় নওশার লাগি,
স্বরাজ বাবুর বট কন্যা
থাকে যেন রাজি।
দোস্তগীরঃ হুজুর মোদের মা বাপ
নায়েব হুজুরে আলা,
শাদির উৎসব করতে গিয়ে
ছুঁড়ব খুশির গোলা।
হরীনা কুন্ডের হরীণ এনে
আমাদের এই বিলে,
জবাই করব একশ’ হরীণ
হাসি খুশি দিলে।
হাতীর পুলের হাতী এনে
উড়াব বাংলার ফ্ল্যাগ,
বিয়ের ডংকার বাড়ি শুনে
নাচবে রয়াল বাঘ।
উটের সারি ভুরি ভুরি
থাকবে আগে পিছে,
টম টম গাড়ি গোটা বিশেক
চলবে তাহার সাথে।
বর যাত্রীরা চলবে সবে
টোপর মাথায় দিয়ে,
বুঝবে সবে পাকুড় বৃক্ষের
কেমনতরো বিয়ে।
‘মন কান্দেরে চ্যাংড়া বন্ধু’
মাইক দিয়ে গান,
ছক্কা-পাঞ্জা গানের তালে
ভরবে সবার প্রাণ।
সাঁইজি বলে গাঞ্জা পাটি
হলুদ বস্ত্র পিন্ধে,
চুলের জটায় লটর পটর
রাস্তায় হাঁটবে সিধে।
সবাই মিলে তুলবে গলায়
বট বৃক্ষের গান,
‘বট কন্যা ঘোমটা খোল
আইলরে মেহমান।’
[কোন একটি গোপন জায়গা যেখানে দুই জমিদারের দুই নায়েব একত্রিত হয়ে বিয়ের শেষ দৃশ্য তৈরী করার পর শুরু হয় বিয়ের চূড়ান্ত উৎসব। বিয়ের দিন উভয় পক্ষের প্রায় দেড় হাজার করে লোক গ্রামের রাস্তা দিয়ে মিছিলের মত উৎসব পরিবেশে এগিয়ে চলে। তারপর তারা জমিদার সরফরাজ খাঁ’র মালেকা দিঘীর পাড়ে এসে থামে। দেখা গেল জমিদার স্বরাজ মূখার্জির পক্ষ থেকে বট বৃক্ষের একটি বড় ডাল এবং জমিদার সরফরাজ মূখার্জির পক্ষ থেকে প্রায় অনরুপ মাপের একটি বটের ডাল নানা রকম রঙ্গিন কাগজ দিয়ে সাজিয়ে আনা হয়েছে। এবং এই ডালগুলি অনেক লোকে বয়ে চলেছে। তবে পাকুড় ডালে একটি ছেলের ছবি এং বটের ডালে একটি মেয়ের ছবি ঝুলছে। এই দু’টি দলের পুরোভাগে রয়েছে ব্যান্ড পার্টি। তার পিছনে রয়েছে বর পক্ষের একশ’ পাজামা পাঞ্জাবী পরিহিত বর যাত্রী এবং মেয়ে পক্ষের শাড়ি জামা পরিহিতা চমৎকার সাজের একশ’ কন্যা যাত্রী। এবার উভয় পক্ষের লোক জন মালেকা দিঘীর পাড়ের সেই বট গাছটির নিকটে এসে মাত্র বিশ গজ দূরে মখোমুখি দাঁড়ায়। হঠাৎ দেখা যায় জমিদার স্বরাজ মূখার্জির নায়েব নিকুঞ্জধন অপূর্ব এক কন্যা বধুর সাজে তাদের লোক জনের ভিতর থেকে বেরিয়ে বর পক্ষের দিকে এগিয়ে যায়। ওদিকে জমিদার সরফরাজ খাঁ’র নায়েব দোস্তগীর বর বেশে পাগড়ি মাথায় তার লোক জনের ভিতর থেকে বের হয়ে আসে। এবার শরু হয় বিয়ের শেষ অংক। ]
দু’জন মখোমুখি হতেই কন্যাবেশি নায়েব নিকুঞ্জধন বলেঃ
নিকুঞ্জধনঃ হনুমান মুখা বাঁদর নাতির
নায়েব নাই দেখি শরম,
পরের মেয়ে দেখে বুঝি
চেপেছে গরম।
আমার শাড়ির অাঁচল ধরে
দিলে তুমি ঘাঁই,
লাজে মরি অবুঝ কন্যা
কি করে বুঝাই।
হ্যাংলা ধড়ের বাংলা মরদ
চোখে কিসের ভোক,
খাড়াও তুমি ধৈর্য্য ধর
শাদিখান আগে হোক।
লাইলা বলে ডেকে তখন
কোর যে আদর,
মিনষে এখন দেখছে লোকে
টেননা চাদর।
দোস্তগীরঃ উ-হু-হু-হু! খ্যামটা নাচে কইলে কথা
নায়েব বুকের সিন্দুক ভাঙ্গে,
লাজের দু’খান অঁখি দেখে
লহুতে মন রাঙ্গে।
সখি ছেড়ে আস চলে
আমার ছাত্তির ’পর,
এত কিসের শরম বল
বাঁধলে আমার ঘর?
ডাগর ডাগর আঁখি তোমার
কোমর মুষ্ঠি সরু,
দেখে তোমায় প্রাণটা আমার
করছে দুরু দুরু।
ধড়ক ধড়ক প্রাণ ভ্রমরা
ছুটেছ তোমার পানে,
বিদায় করে সখিগনে
আস আমার সনে।