**ত্রিবৃত্ত ছন্দ"-এর গঠনরীতি:-


ত্রিবৃত্ত নামের মাঝেই লুকিয়ে আছে এর মূল রহস্য, অর্থাৎ ত্রিবৃত্ত হলো প্রচলিত প্রধান ৩ ছন্দ স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্তের সংমিশ্রণে তৈরি ছন্দ! ত্রিবৃত্ত ছন্দে প্রাস্বরিক নিয়মের ধারাবাহিকতা মেনে চলা হয় না!


**ত্রিবৃত্ত ছন্দ'' এর বৈশিষ্ট্য:-
----------------------------------
উপরে উল্লেখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে "ত্রিবৃত্ত ছন্দ"- এর নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে:-


১)''ত্রিবৃত্ত ছন্দ'' বাংলায় প্রচলিত প্রধান ৩ ছন্দ- স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্তের  মিলনে তৈরি বিশেষ ছন্দ!


২)ত্রিবৃত্ত ছন্দ-তে প্রধান ৩ ছন্দের মূল পর্ব-কাঠামো মেনে চলা হয়! স্বরবৃত্তে ৪ মাত্রার পর্ব, মাত্রাবৃত্তে ৪, ৫, ৬, ৭/৮ মাত্রার পর্ব এবং অক্ষরবৃত্তে ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২ মাত্রার মূলপর্ব মেনে চলা হয়!


৩)"ত্রিবৃত্ত ছন্দ"-তে প্রাস্বরিক বা ত্রিমাত্রিক এর সংস্কৃত লঘু-গুরু ছকবিন্যাস মেনে চলা হয় না!


৪) "ত্রিবৃত্ত ছন্দ"-তে পংক্তির পর্বগুলোতে মুক্তাক্ষর ও বদ্ধাক্ষর একেক স্থানে একেক রকম রাখা হয়! এক পংক্তির পর্বে যেখানে বদ্ধাক্ষর রাখা হয়, পরের পংক্তির পর্বে সেখানে বেশিরভাগ সময় মুক্তাক্ষর  রাখা হলেও পংক্তিসমূহের শেষের বদ্ধাক্ষর অথবা মুক্তাক্ষরের মিল রাখা হয়!!


৫)ত্রিবৃত্তে পংক্তিগুলোর পর্বে বদ্ধাক্ষর ও মুক্তাক্ষরসমূহের সংখ্যা সমান থাকে, তবে একই নিয়মে সাজানো যাবে না!


৬)পংক্তি অথবা চরণগুলোর পর্বে যুক্তবর্ণগুলোর সংখ্যা সমান থাকলেও একই  ধারাবাহিকতা থাকবে না!
যেমনঃ
"সত্যপথে চলি সবাই,
মিথ্যাটাকে দূরে তাড়াই
                     আনতে ধরায় শান্তি!
ধৈর্য্যটাকে সাথে নিলাম,
দুঃখটাকে দূরে দিলাম
                     ভাঙতে সকল ভ্রান্তি!"


এমন হলে তা প্রাস্বরিক বা ত্রিমাত্রিক বা সংস্কৃত ছন্দ; যেখানে এক বা একাধিক ছন্দের তাল-লয় কাটছে।


আবার,
"সত্যের পথে চলি সবাই,
সকল মিথ্যা দূরে তাড়াই
                       আনতে শান্তি ধরায়!
ধৈর্য্য ধারণ করলে ভবে,
সকল দুঃখ বিদূর হবে
                      সত্য-নূরের ছোঁয়ায়!"


এটা "ত্রিবৃত্ত ছন্দে" কবিতাংশ; যেখানে প্রধান ৩ ছন্দের তাল-লয়ে সামঞ্জস্য বিদ্যমান।


৭)ত্রিবৃত্তে চরণ অথবা পংক্তিগুলোতে বিভিন্ন ছন্দে বিভিন্ন মাত্রার অতিপর্ব বা অপূর্ণপর্ব রাখা যাবে।


৮)"ত্রিবৃত্ত ছন্দ" দ্বারা যে কোন রকম কাঠামোয় ছড়া, পদ্য, কবিতা লেখা যাবে, লেখা যাবে সনেট, ত্রিপদী, পয়ার, তানকা, হাইকু, সপ্তপদী, অষ্টপদী, লিমেরিক, লতিফাসহ বিভিন্ন ছন্দকাঠামো!!


আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সংস্কৃত প্রাস্বরিক বা ত্রিমাত্রিক অপেক্ষা "ত্রিবৃত্ত ছন্দ" বেশি রসালো ও প্রধান ৩ ছন্দের তাল-লয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ! তাই সকল কবি-লেখকের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, সচেতন কবি হিসেবে সংস্কৃত প্রাস্বরিক বা ত্রিমাত্রিক নয় "ত্রিবৃত্ত ছন্দ" অনুযায়ী কাব্য রচনা করুন আর রসালো ছন্দোময় কাব্যের স্বাদ গ্রহণ করুন এবং কবিতা পাঠের রুচি ও পাঠক বৃদ্ধিতে অবদান রাখুন!! আল্লাহ সবার সহায় হোন, আমীন!!
*********************************