বিন্যাসে-অবিন্যাসে
মাজহারুল মোর্শেদ
কিছু মনে করবেন না- আপনি?
হ্যাঁ ধ্রুব, আমি সেই নীলা। অতৃপ্ত বাসনার ফেনায়িত
সমুদ্রে, নরকসম যন্ত্রণায় ভাসমান খড়কুটোকে
আঁকড়ে ধরে, অন্তহীন ভেসে চলেছি।
তুমি কেমন আছ- ধ্রুব?
নীলা-বসন্তহীন খরতাপ, পথের ধুলোয় মরা দুর্বাঘাস,
অযাচিত বিকেলের হলুদ বরণ হাহাকারে,
এই যা-বেঁচে বর্তে থাকা।
আমার কি কোন দুঃখ নেই? মরুভুমির কন্টকময়
ক্যাক্টাসের নিঃসঙ্গতার মতো, গ্রীষ্মকাতর হরিণীর
তৃষ্ণাময় ছটফট করা প্রাণ, বুক ফুঁড়ে ওঠে
দীর্ঘশ্বাসের হাহাকার।
সে যাক-গে, কোথায় যাওয়া হচ্ছে এদিক?
নাকি পড়ন্ত বিকেলের মৃদু-মন্দ বাতাস, শাড়ির
আঁচলের ভাঁজে সঞ্চিত করে রাখার
বিলাসী প্রয়াস মাত্র?
এখনো যথেষ্ট পাগল আছ-দেখছি?
বাতাসকে শাড়ির আঁচলে বন্দি?
হাসি পায় শুনে।
বহুদিন পর, যেন হাজার বছরের পুঞ্জিভুত ধ্বংসস্তুপের
ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা প্রাণ,
একটু রোমান্টিকতার স্পর্শ পেল।
তাই এমন নির্লজ্য প্রয়াস বলতে পার।
এটা কিন্তু বেশ। তবে, কবিতা লিখনা আর?
ইচ্ছে করে না। সন্ধিহীন সহস্র শতাব্দীর আরাধনা ভেঙ্গে,
অভিলাষী শব্দচাষের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি, আজ বড্ড বেশী
বিলাসীতা মনে হয়।
শরীরের একি হাল হয়েছে তোমার-
এলোমেলো চুল, ভাঁজহীন পাজামায় ধুলো জমা।
ধ্রুব, তুমিতো-এমন ছিলেনা কোন কালে?
নীলা- কষ্টের ভেতরে কষ্টের ঘর, দ্রোহের ভেতরে
দ্রোহকাল।
গভীর রাতের নিস্তব্ধতায় ক্রোমাগত বেড়ে ওঠে,
কালে ঐতিহ্যগত অসুখ -নিদ্রাহীনতা।
তুমিতো ব্র²চারি- অনাসক্ত হৃদয় তোমার।
কবিতারা জোনাকি হয়ে আসে মধ্যরাতের অন্ধকারে।
তুমি তখন-হৃদয়ের চিত্রকল্প দিয়ে আঁক রঙিন
প্রজাপতির সুখ। বিশ্বাসের বাতায়নে খোঁজ
নির্মল জোছনা।
নীলা- দৃষ্টির সীমানা থেকে হিমালয় যতটা দূর, তার চেয়েও
দূরে তুমি। শিউলি ঝরা উঠোন পেরিয়ে, সেই কবে চলে গেছ-
বেলা ফুরাবার অযুহাতে।
অসমাপ্ত কাব্যের কেঁটে দেয়া শব্দগুলো, আজ বড্ড বেশী
বেমানান, এগুলোকে বাদ দাও ধ্রুব-
ভূলে যাও।
নীলা- চৈত্রের খাঁ-খাঁ দুপুরে, দেবদারু গাছের শীতল ছায়ায়
মুখোমুখি বসে থাকা। আসঙ্গলিপ্সায় তোমার ওষ্ঠাগ্রে আসন্ন হাসি,
আঙ্গুল দিয়ে ধুলোর বুকে আনমনে লেখা নাম,
কি করে ভাবলে যে ভুলে যাব?
লাইব্রেরির করিডরে সেই দেখা, তখনতো বলনি কিছু?
নীলা, বিশাল ব্যবধানের টুকরো টুকরো সময় দিয়ে গড়া,
আমার এ নিজেস্ব ভুবন। তুমি নিজ হাতে ভেঙ্গে দিয়েছিলে
একদিন। তাই এমন শব্দহীন সরে থাকা।
সময় কি থেকে থাকবে- ধ্রুব?
কুয়াশার ভেতরে কুয়াশা, মেঘের ভেতরে মেঘ,
অন্ধকারের ভেতরে অন্ধকার।
কেউ জানে না- শুধু আমি জানি।