প্রণয়ের পংক্তিমালা
মাজহারুল মোর্শেদ

বহুদিন যাওয়া পড়েনি তোমার কাছে
জীবনের অখণ্ড অবসরে ক্লান্তির চুড়ায় হেলান দিয়ে
আজ খুব জানতে ইচ্ছে করছে,
তুমি কেমন আছ।
জীবন সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের বিপরীতে
কি শক্ত পাল তোমার।
কোন এক দৈব শক্তি মূহূর্তের মধ্যেই
তোমাকে পৌছেদিল গন্তব্য স্থলে।
অখ্যাত এক যুবকের তিলতিল করে গড়া
স্বপ্নের ভুবনকে লণ্ডভণ্ড করে, স্থায়ী নিবাস গড়লে
অন্যের ঘরে।
অসম্ভব একটা সম্ভাবনা নিয়ে, সেদিন হঠাৎ করে
বুকের ভেতর ফাগুন এলো,
ঝিরঝির করে বইছে ফুলের গন্ধমাখা বাতাস।
ইচ্চেগুলো ভীষণ আনমনা হয়ে এদিক-সেদিক
শুধু তোমাকেই খোঁজে।
নীলা, তুমি প্রায় বলতে-
‘আমি যদি কখনো হারিয়ে যাই,
মেঘের ওপারে নীল আকাশে-
শঙ্খচিলের ভাঁজ পড়া ডানায় আমাকে খোঁজ।
তুমি কি সত্যি সত্যি এখন, মেঘের ওপারে নীলাকাশে
শঙ্খচিলের ডানায় ভর কওে ভেসে বেড়াও?
নাকি গোধুলির নিঃসঙ্গতায় ঘাপটি মেরে বসে থাক
অন্ধকারে?
স্মৃতিগুলো অবিরত নদীর ভাঙ্গনের মতো
চারিদিকে ছড়ায় শুধু তোমারই হাহাকার।
নীলা, একসময় তুমি হোষ্টেলে ফিরতেই চাইতে না
সারাদিন উদ্বাস্তের মতো এখানে যেখানে,
পার্কের আলো অন্ধকারে, কিংবা সমান্তরাল রেললাইনে
আমার হাত ধরে হেঁটে বেড়াতে।
আমি জানি নীলা,
ইচ্ছে গুলো এখন তোমার হাতের মুঠোয় নেই,
জীবনের জ¦ালে আটকা পড়ে, দম বন্ধ হয়ে আছে।
এখনো কি তোমার মনে পড়ে নীলা?
একদিন অবেলায় হঠাৎ করেই বৃষ্টি এলো,
কি তুমুল বৃষ্টি !
নিলর্জের মতো সেই বৃষ্টি-বস্ত্র হরণ করে ভিজিয়ে দিলো
তোমার অন্তর্বাস, চোখের পাতা।
সেদিন আমি বুকের বাতাস দিয়ে তোমার ভেজাচোখ
শুকিয়েছিলাম।
পার্কের সেই ছোট্ট খড়ের ছাউনিটা, কোন রকমে
মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছিল আমাদের।
বৃষ্টির সানুণয় অনুরোধে একটা লম্বা সময়
আমাদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল।
হঠাৎ নীরবতা ভেঙ্গে বুকের কোনে একটা চাঁপা
নিশ্বাস ফেলে একটু অন্য মনঃষ্ক হয়ে তুমি বললে-
তোমার বিয়ের কথা হচ্ছে।
ছেলে নাকি বেশ ফর্সা লম্বা, উচ্চশিক্ষিত,
আর বিদ্যা বুদ্ধিতেও অসাধারণ!
প্রথম দেখাতেই তুমি নাকি তার
প্রেমে পড়ে গিয়েছিলে।
তুমি কি দ্বিধাহীন অনায়াসে না সেই গল্পটা
আমাকে শুনালে।
সেদিন তুমি বোঝনি-
আমার বুকের ভেতর ঝড় উঠেছিল,
ভীষণ ঝড়।
নদীর পার ভাঙা শব্দের মতো আমার সবকিছু
ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল।
বলি বলি করেও তোমাকে,
কোনদিন বলা হয়নি সে কথা।
সেই না বলা কথা গুলো বুকের পাঁজরে বন্দি হয়ে-
আজও ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠে।