কে সেই মানুষটি
অনুবাদঃ বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (মূল রচনা: আন্তোরিও হাসিন্টে)


সেই বিরাট খামারটিতে কোন বৃষ্টি হয় না
আমারই কপালের ঘাম দিয়ে গাছগুলিকে তৃষ্ণা মেটাতে হয়।
সেখানে যে কফি ফলে
আর চেরি গাছে যে টুকটুকে লাল রঙের বাহার ধরে
তা আমারই ফোঁটা ফোঁটা রক্ত, যা জমে কঠিন হয়েছে ।
কফিগুলিকে ভাজা হবে, রোদে শুকুতে হবে
তারপর গুঁড়ো করতে হবে
আফ্রিকার কুলির গায়ের রঙে ঘোর কৃষ্ণ বর্ণ-
আফ্রিকার কুলির জমাট রক্তে ঘোর কৃষ্ণ বর্ণ।


যে পাখিরা গান গায়- তাদের জিজ্ঞাসা কর,
যে ঝর্ণারা নিশ্চিন্ত মনে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছে - তাদের,
এই মহাদেশের মধ্যকার মানচিত্র থেকে
যে বাতাস মর্মরিত হচ্ছে -তাদের-
কে ভোর না হতেই ওঠে,
কে তখন থেকেই খেটে মরে,
কে লাঙল কাঁধে দীর্ঘ রাস্তা কুঁজো হয়ে হাঁটে,
আর কে-ই বা শস্যের বোঝা বইতে বইতে ক্লান্ত হয়,
কে বীজ বপন করে,
আর তার বিনিময়ে যা পায়, তা হল-
ঘৃণা, বাসি রুটি, পচা মাছের টুকরো,
শতছিন্ন নোংরা পোষাক, কয়েকটা নয়া পয়সা -
আর এরপরেও কাকে পুরস্কৃত করা হয়
চাবূক আর বুটের ঠোক্কর দিয়ে।


কে সেই মানুষ-
কে উপরওয়ালাকে গাড়ি , যন্ত্রপাতি, মেয়ে মানুষ কেনার টাকা
আর মটরের নিচে চাপা পড়ার জন্য
নিগ্রোদের মুণ্ডগুলিকে জোগান দেয়-
কে সাদা আদমিদের বড়লোক তৈরি করে-
তাকে রাতারাতি ফাঁপিয়ে তোলে-
পকেটে টাকা জোগায়-


কে সেই মানুষ-
তাদের জিজ্ঞাসা কর-
যে পাখিরা গান গায়,
যে ঝর্ণারা নিশ্চিন্ত মনে এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করছে,
যে বাতাস এই মহাদেশের মধ্যকার মানচিত্র হতে মর্মরিত হচ্ছে-
তারা সকলেই উত্তর দেবে-
ঐ কালো রঙের মানুষটা, যে দিন-রাত গাধার খাটুনি খাটছে।


আহা !
আমাকে অন্ততঃ ঐ তাল গাছটার চুড়ায় উঠতে দাও-
সেখানে বসে আমি মদ খাব
তালগাছ থেকে যে মদ চুইয়ে পড়ে
আর মাতলামোর মধ্যে আমি নিশ্চয় ভুলে যাব
আমি একজন কালো রঙের মানুষ
আমার জন্যেই এই সব ।