নিচ্ছিদ্র বেষ্টনী, নিভু নিভু তন্দ্রাহীন আঁখি
আসমান ভরা জোছনা তবুও অমাবশ্যার করাল গ্রাস
কোথাও সামান্য আর্তনাদ তারপরে একেবারে নিশ্চুপ।
আবাল,বৃদ্ধ,বণিতা সবাই একই ছায়াবেষ্টনীতে,
স্বদেশের মূর্তিমান নায়ক।
ভাঙাচোরা একটা টেণ্ডেস্টর পাটের রশি দ্বারা শক্ত বাধনে আবৃত,
কতবার হাত ফসকে মাটিতে আচড়ে পড়েছে
অথচ এটিই আজ কির্ম্বালী,
এ কথা শতবছর পেরোনো এক বৃদ্ধ দাদুর।
বাকরূদ্ধ কন্ঠস্বরে স্মৃতি হাতরিয়ে বলতে শুরু-------
আসলে এ বলার কি কভূ শেষ আছে।
পাশের ধানক্ষেতে আগাছা উপড়ে ফেলতে ফেলতে হঠাৎ চিৎকার-
কণ্ঠস্বর পরিচিত মনে হল,
দৌড়ে এসে দেখি সেই যুবতী,ষোড়শীর আত্মচিৎকার,
বছর কয়েক আগে যাকে ঢের পালকি করে ঘরে তুলেছি।
তারপর কি হল বলতে পারি না।
যখন জ্ঞান ফিরলো, রাইফেলের বাটের আঘাত ঠিক মাথার উল্টো দিকে আবিষ্কার করলাম
তারপর থেকে যতদিন কাছে আসতে চেয়েছি সোনামুখের !
শুধু আচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে দেখেছি, দেখেছি অশ্রুসিক্ত দুটি আঁখি।
একটা শক্ত প্রতিজ্ঞা বুকের ভিতর চেপে ঝাপিয়ে পরলাম।
তারপর সামনে থেকে কত সহকর্মীকে মরতে দেখেছি,
আফসোস হত,কিন্তু গর্ব মিশ্রিত ছিল তাতে।
বলতে বলতে অশ্রুসিক্ত আখিযুগল আর থুতুনির কাঁপুনি অনবরত।
স্পষ্টতই ! আরও অনেক কিছু বলার ছিল কিন্তু বাকরুদ্ধ কন্ঠস্বর।
পরক্ষণেই মৃদু ঝলকানিতে ঠোটের কোণে কিছু বলার প্রত্যয়-
যেদিন আবার সেই ভাঙা টেণ্ডেস্টর টিতে শুনতে পেলাম,
জয় বাংলা !
সেদিন সোনামুখ আরেকটাবার হাসলো,তারপর আবার নিশ্চুপ !
রাতের করাল গ্রাসে আটকে গেল মুখের যত ভাষা,
আর আবেগ মিশ্রিত শত আশা।
সবটা শুনতে পারিনি তার আগেই কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম।
আচ করতেই লোমকূপ শিহরিয়ে ওঠে,
আসলে সেদিন কি ঘটেছিল একাত্তরে।
স্মৃতিচারণ নয়, শুধুমাত্র কল্পনাতেই এমন,
তাহলে বাস্তবতা কি ছিল অনুমেয় না।
আজ তারা এ দৈন্যদশা থেকে বেরুতে চায়, তাতেও ষড়যন্ত্র।
প্রশ্ন তাদের, আরেকবার কি শক্ত হাতের বাধনে
রাজপথে নামতে হবে,
                      একাত্তরের মত  ?


নিটার হল
রুম নং-৩০৮
১৬/১২/২০১৬