খোকা থেকে হিমালয়


মোঃ মোস্তাফিজুর  রহমান


১৭ই মার্চ ১৯২০ সাল,
মঙ্গলবার--- রাত চার ঘটিকা,
টুঙ্গিপাড়ায় সেদিন প্রত্যুষ হয়েছিল একটু আগেই।


কিন্তু,
অন্য দিনের চেয়ে আজকের দিনটি ভিন্নমাত্রার -----
পাখির কিচিরমিচিরে নিত্য ভোর হলেও -----
আজ আযানের ধ্বনি ভেসে আসছে-----
বাতাসে-বাতাসে আল্লাহু আকবর শুনি----
মনে হলো কোন নবজাতকের আগমন ঘটেছে
ফজরের আযান শুরু হতে-----
তখনও ঢের বাকি,
শেখ লুৎফর রহমানের ঘর থেকে-----
কান্দন ধ্বনি, ধ্বনিত হচ্ছে-----


নবজাতক এসেছে,
মায়ের মুখের হাসি----
বাবার হৃদয়ে, কি যে আনন্দের দোলা----লেগেছিল সেদিন
শেখ লুৎফর রহমান ছাড়া কে আর জানবে? একথা---


সেই নবজাতক আর কেউ না,
মুজিব, ---- শেখ মুজিবুর রহমান,
মা সায়েরা খাতুনের কোল আলো করে খেলছে----ছোট্ট খোকা।
ধীরে-ধীরে খোকার বেড়ে উঠা------
খোকা পরিনত হচ্ছে মুজিবে-----,সুদৃঢ হিমালয়ে---


মুজিব, নামটির অর্থ উচ্চারণকারী---
তিনি নামের অর্থ উপলব্ধি করেছিলেন বৈকি,
এলো ১৯৭১ সাল,
আন্দোলনের দানা বাঁধছে চারদিকে-------,
পূর্ব পাকিস্তানিদের উপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চাপিয়ে দিচ্ছে -----
ঘৃণিত বন্যপশুর দল,
এবার মুক্তির পালা,
আর কত সহ্য করবে বাঙালি জাতি-----


৭ই মার্চ,
সেই ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণ------।
এবার উচ্চারণের কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত ----,
জনতার মহাসমুদ্র অধীর আগ্রহে উল্লসিত ------।
তারা উচ্চারণ শুনবে, উচ্চারণ!


নেতা এলেন,
বজ্রধ্বনি বাজছে পুরো জনস্রোতে------
নেতা উচ্চারণ করলেন-----
প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল,
তোমাদের যা কিছু আছে,
তাই নিয়ে----, প্রস্তুত থাকো----
এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম----
এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।
মনে রাখবা----
রক্ত যখন দিয়েছি,রক্ত আরও দেব-----,
এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো----ইনশাআল্লাহ্।


২৫শে মার্চ মধ্যরাত,
নেতা, ওয়ার্লেস যোগে----
উচ্চারণ করলেন, বাংলার স্বাধীনতা ---
কাপুরুষের দল সাহস পেলো না,
নেতাকে সামনে থেকে মোকাবেলা করার,
গ্রেফতার হলেন নেতা।


রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলে সর্বাত্মক-----
বীর বাঙালি ছিনিয়ে আনলো স্বাধীনতার অগ্নিসূর্য।


মুজিব বিহীন,
স্বাধীনতার আনন্দ----
বাঙালি জাতিকে স্পর্শ করল না---।
এবার অপেক্ষার প্রহর গুনছে গোটা জাতি----,
তাঁর আগমনের প্রত্যাশায়----।


এলো, ১০ জানুয়ারি ১৯৭২,
বীরের বেশে নেতার প্রত্যাবর্তন -----
স্বাধীনতা যেন পূর্ণতা পেলো আজ।


এবার ভঙ্গুর দেশকে-----
ঢেলে সাজাবার চেষ্টা----
দক্ষ হাতের, নরম ছোঁয়ায়-----
তুলির আঁচড় কেটে যাচ্ছেন বাঙালির নেতা!


বর্ণিল সজ্জা!
বেশিদিন সহ্য হলো না ঘাতকদের।
এবার মরণকামড় বসানোর ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের জাল পাততে লাগলো----।


এলো ভয়াল ৭৫-----
সেদিনও ভোররাত,
দুমদুম বুটের শব্দ---
হায়েনার দল অগ্রসর হচ্ছে----
গুলির আওয়াজে ঘুম ভাঙলো নেতার।
ঘাতকের বুলেটে বিদ্ধ হলেন ---- বাঙালির নেতা।
বাংলার জমিন রঞ্জিত হলো
তারই জনকের রক্তে------
শহীদ হলেন নেতা----।
আমরা হারালাম এক সুদৃঢ় হিমালয়কে।


স্বাধীনতা-----, আবার শ্রীহীন হলো।
সোনারবাংলা-----হলো---- এতিম সন্তান।
তারই---- জন্মদাতাকে হারিয়ে।


কপিরাইট নিষিদ্ধ, শেয়ার করা যাবে। স্বত্ব সংরক্ষিত।
তারিখঃ রাত-১ঃ৪৫, ০৫/০৮/২০২০
খোকা থেকে হিমালয়, স্বপ্নের বাংলাদেশ।
ছবিঃ সংগৃহীত