আনন্দ সারাটা জীবন দুঃখ-কষ্টে তেলেভাজা পিঠার মতো
এফোঁড় ওফোঁড় হয়েছে। দুবছর বয়সে ওর মা মরল।
পাঁচে হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় চলে গেল বাবা।
এতিম আনন্দকে দেখার মতো ইহধামে আর কেউ থাকল না।
স্রোতে গড়ানো নামপত্তনহীন পাথরের মতো গড়াতে গড়াতে
শেষমেশ ওর ঠাঁই হলো চন্দন নগরে, রামদয়ালের আশ্রমে।
সেই সাধুও দু’হাজার আট সালে ভারতের কুম্ভ মেলায় গেল,
আর ফিরে এল না।
আনন্দ যেন জীবনে যে ডাল ধরেছে সে ডালই ভেঙ্গে পড়েছে।
ডাল ভাঙতে ভাঙতে আনন্দ’র অভিশপ্ত পৃথিবী
মরুভূমির নিষ্পত্র বৃক্ষে পরিণত হয়েছে।


আটাশ বছর অশ্রুর অববাহিকায় বসবাস করতে করতে
আনন্দ এখন পরীক্ষিত নিরানন্দের উপত্যকা। এখন সে জীবনের
মর্ম খুঁজতে বাউলের বেশ ধরেছে। সাধক ফকিরের মতো কাঁধ
বরাবর জটা চুল, লম্বা দাড়ি, গায়ে কাটা থানের সফেদ বসন,
গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। নিমকাঠের দোতারা বাজিয়ে পথে পথে
গান করে। কেউ তাকে বলে সাধু, কেউ বলে ভিখারি।
আনন্দ’র তাতে ন্যূনতম ভ্রূক্ষেপ নেই।


আনন্দ এখন যেকোনো নারীকে দেখলে ডাকে-মা।
আর পুরুষকে বলে-বাবা। সবাই ভাবে, এটা সাধুর বোল।
আদতে কাদামাটিতে বেড়ে ওঠা আনন্দ যেন মৃত্তিকার কাছেই
চূড়ান্ত অর্বাচীন। আনন্দ তাই মাটি দেখলেই খামচে ধরে,
ওখানে ওর অপাংক্তেয় শেকড়টাকে হন্যে হয়ে খোঁজে।
আনন্দকে কেউ আনন্দ নামে ডাকলে তার দিকে পুকুরের
শান্ত জলের মতো অপলক তাকিয়ে থাকে, জবাব দেয় না।
আনন্দকে কেউ আনন্দ নামে ডাকলে আনন্দ’র চোখের কোণে
ভেসে ওঠে সার্বভৌমহীন মেঘের মতো এক পরাজিত ঈশ্বর।