"কি খুঁজছিস বাবু?
আসল ভারতবর্ষকে দেখতে চাস বুঝি,
যেথায় আছে রুক্ষ মাটি লাল পাহাড়ীর দেশ,
সেথায় খুঁজিস আসল মানুষ, নিজের স্বদেশ।
কাছে গেলে অশিক্ষার ভারে থেমে যাবে নিশ্বাস,
মনের প্রাচীনত্বে যুক্ত হবে অন্য এক বিশ্বাস।"


"আমি হলাম গাঁয়ের ছেলে দিন আনি দিন খাই
সাতসকালে পান্তা খেয়ে মাঠে হাটে খাটতে যাই।
নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, কষ্টে ভরা জীবন,
আশায় থাকি- পেটভরা ভাত ঠিক জুটবে সারা জীবন।
বন্যার জলে ভেসে যায় আমার শরীর নিংড়ানো ঘাম,
দিনরাত খেটে বানভাসি হয় হারানো ফসলের দাম।
আমিই যে তোর ভারতবর্ষ আলোর পেছনে থাকি,
শিক্ষা নেই, অচেতনে জীবন-কাব্যে মহাভারত আঁকি।"


"আমি গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার, ডিগ্রী নেই কোনো-
আসলে এই গন্ডগ্রামে, দেবতারা আসবে বলো কেন?
অসুখ হলে ভরসা শুধু ওঝা, ফকির, তাবিজ,
আমার মতো হাতুড়ে,গাছগাছালি আর ফলের বীজ।
দাই মায়েরাও মিলবে হেথায়, আজ‌ও মরে পোয়াতি,
অস্বাস্থ্যকর নাড়ী কাটা, নোংরা আঁতুড়ঘর,
রামমোহনের দেশে মোরা আজ‌ও র‌ইলাম পর।"


"কুসংস্কারের নিদান হাঁকেন, গ্রামের মোড়লমশাই
জগতে কি ঘটছে কোথায়, মেডিকেলের উন্নতি,
চাঁদে যাওয়া রকেট মানুষ, পড়াশুনা না জানলে কিই বা ক্ষতি।
আমিই যে তোর ভারতবর্ষ, আজ‌ও অপেক্ষায় থাকি
আমাদের মাঝে শিক্ষার আলো, জ্বালাতে আসবি তোরা কি?"


"আমি চম্পা, বয়স ১৫, মায়ের সাথে যাই কাজে-
আচার, পাঁপড় তৈরি, মাদুর ঝুড়ি বোনা,
তবু ওই শহুরে বাবুদের মন ভরে না,
হাতে মেলে মাত্র দুটো পয়সা গোনা।
বিয়ের জন্য তৈরি হচ্ছি জন্মকাল থেকে,
"পড়াশুনা করে কি বিদ্যেধরী হবে? তারচেয়ে কাজ শেখ,
যদি কেউ পছন্দ করে তোকে।"
বাবু আমাদের কথা লেখ, আমরাই প্রকৃত ভারতবর্ষ,
তাকিয়ে দেখ,পিছিয়ে রয়েছি কতো শত আলোকবর্ষ।"


জোয়ার ভাঁটায় গড়িয়ে যায় নিঃসীম চেতনা
বন্যার জলে মেশে জীবনের নোনা জল আর বেদনা।
আলো ঝলমলে এই ভারতের প্রতি ঘরে ,প্রতি দোরে
প্রতিমুহূর্তে বাঁচার লড়াইয়ে আমরা আছি বেঁচে মরে।