নগ্নতা নয়, ভালোবাসো
মোজাম্মেল সুমন


মেয়েটি কবুল কবুল কবুল বলামাত্র পরিপূর্ণ হলো বিয়ের পিঁড়ি,
সৃষ্টিকর্তার নির্দেশে এক মহাবন্ধনে শুরু হলো জীবন নামক সিঁড়ি।
নতুন অধিকারে ঢাকা পড়ে যায় আগলে রাখা মেয়েবেলার দখল,
মা-বাবা ভাইবোন বন্ধুবান্ধব প্রতিবেশী সব হয়ে যায় হাওয়া বদল।


আমাদের সমাজের চিরাচরিত নিয়মে মেয়েটির হলো শুভ পরিণয়,
মা-বাবা নয় বরং স্বামীর অধীনে আজকে থেকে হবে নতুন পরিচয়।
অসহায় নিরুপায় মেয়েটির সাধের পুতুলখেলা হয়ে যায় সংহার,
ইচ্ছা অনিচ্ছায় জীবনের তাগিদেই আরম্ভ হয় বেঁচে থাকার সংসার।


অন্যদিকে পুরুষ তুমি তো প্রেমিক না হয়ে হলে সেই আদিম স্বামী,
তোমার কথাতেই রাজত্ব, স্ত্রী নামেই রানি মাত্র, তোমার ইচ্ছাই দামি।
কিংবা স্ত্রী সে তো পুরুষের জন্য বৈধ রক্ষিতা নামে ভোগ্য পণ্য মাত্র,
যখনতখন ইচ্ছে মতোন জীবিত অনুভূতিতে পোস্টমর্টেম নারীর গাত্র।


আচ্ছা তোমার স্ত্রীর প্রেমময় লবনাক্ত দেহখানি স্পর্শ করার আগে,
ওগো তুমি ভালো আছো তো? একবারও কি তা বলতে ইচ্ছা না জাগে?
অথচ তুমি কর্মক্ষেত্র থেকে দিনশেষে ঘরে ফিরেই স্ত্রীর ব্রা খুলতে ব্যস্ত,
হায়রে পুরুষ, পুরুষের ভালোবাসা যেনো কেবল দেহতেই আছে ন্যস্ত।


একটা নারীর স্তন থেকে মাত্র দুই ইঞ্চি গভীরে একটা হৃদপিন্ড আছে,
হায়রে কামুক পুরুষ, কখনোই কি পৌঁছোতে পেরেছো তারই কাছে?
অথচ কখনো ভুল হয় না কনডম কিনে ফিরতে রাস্তার মোড় থেকে,
কিংবা পকেটে সেক্স ট্যাবলেট নিয়ে স্ত্রীকে রাতে জেগে তুলতে ডেকে।


এই যে পুরুষ মশাই, আপনি এমন কেনো? আপনারই তো বৌটা,
সন্ধ্যায় ঘরে ফিরলে কেমন হতো যদি হাতে থাকতো কাজলের কৌটা!
কিংবা হাতে থাকলো লিপস্টিক এবং লাল টিপের পাতার বাহার,
হাসিমুখে ফিরে প্রিয় নামে ডেকে দেখতেন স্ত্রীর কতোটা খুশির পাহাড়।


সংসার হলো স্বামীস্ত্রীর মাঝে স্বর্গীয় উদ্যান যা উপভোগ করা মানি,
অথচ আমরা বেশিরভাগ সময় শুধুশুধু ভোগ করাকেই সংসার জানি।
ভোগ আর উপভোগের মাঝখানের পার্থক্যটা বুঝতে কষ্ট হয় বলেই,
আমাদের সুখময় দাম্পত্য জীবনে একঘেয়েমি নামক অস্বস্তি চলেই!


সংসার মানে আসলে নিয়ম করে স্ত্রীর ব্লাউজের বোতাম খোলা নয়,
এসব খোলামেলা নিয়মের বাইরেও অনেককিছু অনুভূতি থাকতে হয়।
আসলে সংসার একটা দায়িত্ববোধের ব্যাপার যা পারস্পারিক সন্ধি,
যেখানে ছোটো ছোটো মুহুর্তগুলো অনেকবেশি গুরুত্বে রাখা বন্দি।


পতিতালয়ের বেশ্যার মতো স্ত্রীকে কাছে টানলে অথচ নিলে না সম্মতি,
যৌন উন্মাদনা শেষে উল্টা পাশ হয়ে ঘুমানোকে বলে নাকো দম্পতি।
ভালোবাসায় কখনো অনিহা আসে না বরং থাকে অনিঃশেষিত মায়া,
ভালোবাসা নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে লেগে থাকা নিজের জীবনে পাওয়া ছায়া।


বীর্য স্ফলনের পর যদি আপনার মনে স্ত্রীর প্রতি বিরক্তের ছাপ জোটে,
তাহলে আপনি কামুক স্বামী, কখনোই প্রেমিক হয়ে উঠেননি মোটে।
প্রেমিক হলে স্ত্রীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে নিদ্রাপেক্ষায় থাকতেন,
মৃদুসুরে গুনগুন করে আবছা আলোয় চোখে স্ত্রীর ছবি আঁকতেন।


নগ্ন দেহের প্রতি কোনো মুগ্ধতাই নেই বরং মুগ্ধতা পাওয়া যায় স্ত্রীর কাজলে,
মুগ্ধতা থাকে স্ত্রীর চুলে, গালের টোলে, কপালের টিপে, চুড়িতে কিংবা আঁচলে।
ভালোবাসা মানে তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে ৩৬৫ বার মরে যাওয়া,
ভালোবাসা মানে তোমাকে পেয়ে পৃথিবীর মাঝে যেনো সবকিছুই পাওয়া।


ভালোবাসার জন্য আপনার যেমন শরীরকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়,
তদ্রুপ শরীরের জন্য ভালোবাসাকেও অস্বীকার না করে করতে হবে জয়।
ভালোবাসায় তো শরীর আসবেই কিন্তু শরীরকে ভালোবাসা ভাবা ভুল,
তবে শরীরেও যেনো ভালোবাসা আসে, সেটার প্রেমোপলব্ধি করাই মূল।


আমরা এমন পুরুষ নারীর যোনির গভীরতা আবিষ্কার করতে শিখেছি,
কখনো কি নারীর হৃদপিন্ডের গভীরতা মাপার তথ্য মনের খাতায় লিখেছি?
একটা রাত নারীকে উলঙ্গ না করে মুখোমুখি হাতে হাতে রেখে থাকুন বসি,
কিংবা সুখদুঃখের গল্প করুন অথবা দুজনে দেখুন রাতের পূর্ণিমা শশী।


নারীর ইচ্ছা অনিচ্ছাকে বুঝতে শিখুন, সম্পর্কে ঢালুন বিশ্বাসের অভয়,
নারীর ভালোলাগাকে গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়িত করুন তার প্রতিটা সময়।
পরস্পরকে বুঝতে শিখুন, তাতে ভালোবাসা বাড়বে, কমবে নাকো,
ভালোবাসা দিয়ে ভালোবেসে ভালোবাসাতেই চিরকাল সুখি থাকো।