সাতাশ বছর আগে দেখা সেই মুখ
সেই রূপ নাসিকা কপোল চিবুক
আরক্তিম এক ভালোবাসার মানুষ
না জানি কত বদলে গ্যাছে আজ?
সেই হরিণী হরিণী চোখ কালো ডাগর মণি
সেই অঞ্জনের টান-
সেই ব্যাকূল ব্যাকূল চাহুনি আনচান
ভ্রমর কালো ভ্রুর নীচ তার আশপাশ
না জানি তাতে পড়েছে কী অজানা বেদনার ভাঁজ?
কালো দাগ কালশিরা এসে করেছে ফ্যাকাসে!


কালো চুল কালো খোঁপা খোঁপার কুশি
কালো ভ্রু কালো তিল কালোর শশী
খুব কাছ থেকে দেখা ঊর্বশী
অষ্টাদশি প্রিয়তমা এক মুখ
ভালো লাগা ভালোবাসা হৃদয়ের রং
প্রিয়তমা এক মানুষ
এতদিনে হয়তো সব কিছুই বদলে গ্যাছে তার
সাতাশ বছর আগে দেখা সে এক চন্দ্রিমা মুখ
অপরূপ সৃষ্টি বিধাতার।


সেই সাতাশ বছর আগে যার হাতে রেখে হাত
বলেছিলাম, আমি তোমায় ভালোবাসি
ভালোবাসি প্রাণের চেয়েও
তুমি যে আমার সবার চেয়ে প্রিয়।
দোহাই ওগো! আমাকে ভুলো না যেনো!
কে জানে সে আজ ভুলে গ্যাছে কিনা?
তার আপন ঘর আপন ঠিকানা
গোছাতে গোছাতে।
আমি কিন্তু ভুলি নি তার এতটুকু কিছুতে।


সে আমাকে ভালোবেসে ছিলো কিনা?
জানি না। জানা হয় নি
বিদায় বেলা তার শেষ চাহুনি
অশ্রুত নয়ন ব্যথিত অধর কাঁপনি
পায়ের আঙ্গুলে খোঁচা উঠোনের মাটি
পৃথিবীর সব চেয়ে  বিষাদতম সেই
বৃশ্চিক দংশনের স্মৃতি
ভালোবাসার সেই এক কঠিন মরণ
আজো ভুলি নি-ভোলা যায় না!
ইচ্ছামৃতের বিনিময়েও না।
আত্মার ভিতর প্রতিদিন এখন
সে করে আরো নতুন নতুন ক্ষরণ।


আমি ফিরে এলাম ফিরে এলাম
আহত এক জনম। এখনো ফিরছি
দীঘল পথের এক ট্রেন-
সাতাশ সাতাশ বছর সমান্তরাল
সাতাশ সাতাশ বেদনার মহাদেশ
সাতাশ সাতাশ জীবনের প্লাটফর্ম
একা করে পাড়- চলছি তো চলছিই
ঝকঝক ঠকঠক দূ্র ছোটা ধ্বনি
হুহু বাতাস মরুর শনশনি
বুকের চুল্লিতে স্ফুরণ আগুনের গনগনি
মাঝে মাঝে দিক ফাটা সাইরেন...
যাত্রিহীন দূরপথ উদাস বগি একা টেনে চলছি-
সাতাশ বছর আগে দেখা সেই মুখ সেই রূপ
সে আগুনে পুড়ে পুড়ে এখনো জ্বলছি তো জ্বলছি ই।