সাতাশ বছর আগে এক তরুণ
পায়ে হেঁটে কলেজ ফিরতে ফিরতে
কথাচ্ছলে তার হৃদয়ের কথা
সাথের তরুণীকে বলেছিলো। বলেছিলো,
এ পড়ন্ত বিকেল গোধূলি মেঘ ঘাসের রং
নূয়ে পড়া দিগন্ত আকাশ নদী
হলুদ আলোয় ডুবে থাকা ভ্রমর প্রজাপতি
ফুলের পাশে ফুল বনের কাছে বনস্পতি
আমার কাছে তোমার কালো চোখ
আর আমাদের এ যৌবনের শপথ
আমি তোমায় ভালোবাসি।


‘ভালোবাসি’ এ শব্দে তরুণী কিছক্ষণ নিশ্চুপ।
তরুণ ভাবে কি জানি ভুল হয়ে গেলো কি না?
পাছে যদি সে আঘাত পায়?
এ ভাবনায় নিজেরে ভাবে অপরাধী খুব।
হাঁটতে হাঁটতেই অদ্ভুত- বিস্ময়
পথ দাঁড়িয়ে তরুণী অপলক নেত্রে
ফ্যালফ্যালিয়ে সেই তরুণের দিকে চায়।
ভালোবাসি ভালোবাসায় নীরব চেয়ে থাকে
তারপর দু’চোখ আদ্র হয়ে আসে নতুন বেদনায়।
আঙ্গুল ইশারায় মেঠোপথ দূরগ্রাম দিগন্ত নদী
আরো দূর আরো দূর দূরের ছবি
নীল নীল অপার গোধূলির সাঁজ
অনাবিল সময়ের অসীম বিকাশ
সাক্ষী রেখে বলছি আমিও তোমায় ভালোবাসি।


মুহূর্তকাল সব কিছু স্থির!
চার চোখ চার চোখে মিশে একাকার।
তরুণ ভাবে বিকেলের এ অযাচিত পাওয়া
হাজার বছরে ভাগ্যে মেলে ক’জনার?
তরুণী ভাবে এ অমূল্য নিধি
কেনো বিধি আরো আগে দেয় নি উপহার?
তারপর কাছাকাছি পাশাপাশি হেঁটে যাওয়া
সেই আকাশের নীচ সেই বিকেলের রং
সেই মেঠোপথ মাঠের ঘাস রোদের শরীর
সাক্ষী থাকে প্রথম ভালোবাসার
চোখে চোখ হাতে হাত রাখার।


দিন যায় দিন আসে দু’জনের মাঝে
আরো বাড়ে ভালোবাসার ঋণ।
তরুণ ভাবে বড় হলে
তরুণীকে এনে দেবে সোনার হরিণ।
তরুণী ভাবে ঘর পেলে দু’জনে
খুব করে খোঁপা বেঁধে তরুণকে দেখাবে নিজনে
আরো কাছে টেনে দেখাবে সুখের গোলাপ
তরুণ দেখাবে তারে সোনার মোড়ক খুলে
অনাগত এক সুন্দর ভবিষ্যৎ।


সেই তরুণী এখন দূর গাঁয়ের এক অধ্যাপকের ঘরণী
খুব সহজ করে সাঁজায় সোনার সংসার
খোঁপা বাঁধে আয়না দ্যাখে ছেলে মেয়ে স্কুলে পাঠায়।
সেই তরুণ জনাকীর্ণ এক শহরে
চাকুরী করে গাড়ী চড়ে অফিস যায়
জ্যামে পড়ে ঘড়ির কাঁটা দ্যাখে
বাজার করে বউয়ের কাছে ফিরে যায়।


সেই তরুণী এখনো মাঝে মধ্যে
লাউয়ের ডগা পুঁইয়ের লতা মাচায় তুলে দিতে দিতে
দূরের পানে চায়-
আঁখির পাতা আদ্র কর অবাক হয়ে থাকে।
তরুণ অফিস কাজের ফাঁকে ফাঁকে
নিজের অনেচ্চায় পুরনো পঞ্জিকার পাতা
শিথিল আঙ্গুলের ডগায় বার বার উল্টিয়ে উল্টিয়ে দ্যাখে।