আমি বারবার ঢাকা যাচ্ছি একটা সরকারি চাকরির জন্য,
কোম্পানি, এনজিও বা রেস্তোরাঁয় চাকরি হলেও আমি দিব্যি ভালো চলতাম।
তবে তোমার পরিবার একটা সরকারি চাকুরে ছেলে চায়,
তার জন্যই আমি এত বেশি সিরিয়াস, মূলত তোমার জন্য,
অথচ আমার চাকরিটা হয়েও হচ্ছেনা।
বারবার যাওয়া আসার ফলে অচেনা শহরটা কেমন চেনা হয়ে গেছে এখন,
এদিকে তুমি অচেনা হয়ে যাচ্ছো,
তোমার আর ভালো লাগছেনা আমাকে, তুমি ছুটি চাচ্ছো।
তোমাকে ভালো কোন গিফট দিতে পারছিনা,
নিজেরই ভালো দামী কোন শার্ট নেই কেবল গোল গলার গেঞ্জি পড়ি,
তোমার বন্ধু-বান্ধবীদের সামনে এসব কারণে আমার পরিচয় দিতে পারোনা,
তবুও এসবের মাঝেই কিছু টাকা বাঁচিয়ে তোমাকে সস্তা দামের চুড়ি কিনে দেবার কথা ভাবছি সাথে দুটো ডেইরি মিল্ক।
আগে তুমি বলতে আমি ভালো জিনিসই সস্তা দরে কিনতে পারি যাচাই করে,
তাই সেসময় তোমার সস্তা চুড়িই ভালো লাগতো, চকোলেটতো কেড়েই নিতে,
আর এখন আমাকেই খুব সস্তা মনে হয় তোমার।
.
আসলে তোমার হাল ফ্যাশানের আরও বেশি স্মার্ট কাউকে প্রয়োজন,
উচ্চতায় তোমার থেকে কম করে হলেও আট ইঞ্চি বেশি, দেখতে সুঠাম দেহী, স্বাস্থ্যবান, মাশাল্লাহ চেহারা,
সেনাবাহিনীর কোন সৈন্য বা উচ্চপদস্থ অফিসার,
তুমি ভাবছো এমন কাউকে পেলে বন্ধু-বান্ধবীদের একটা ট্রিট দেবে,
সবার সামনে হাত ধরে ঘুরে বেড়াবে।
তোমার মা'ও কিচ্ছু বলবেনা বরং বাহবা দিবে,
তিঁনি সকাল সন্ধ্যায় নামাজ পড়ে খোদার শুকরিয়া করবেন,
আর পাশের বাসার ভাবিদের কাছে গর্ব করে বলবেন 'মেয়ের আমার পছন্দ আছে'।
.
উল্টোটা ভাবা যাক দেখি,
আমার চাকরি হয়ে গেছে, সরকারি চাকরি, ভালো সুযোগ সুবিধা, সব মিলিয়ে মোটা বেতন,
তোমাকে প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে অনলাইন থেকে হাতের কাজ করা দামী একটা জামা কিনে দিলাম,
অথবা শহরের নামকরা কোন শপিংমল থেকে।
আর হাতে বেশকিছু টাকা দিয়ে বললাম তোমার বন্ধু-বান্ধবীদের ট্রিট দাও,
তুমি সবাইকে আমার কথা বলে দিলে,
ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়ে দিলে 'আমি আছি'।
মাঝেমধ্যে রেস্টুরেন্টে যাচ্ছি, এখন আর টাকা নেই বলে না যাওয়ার বাহানা করিনা,
দুজন বসে বিরিয়ানি কিনে খাই, বিরিয়ানি তোমার বেশি পছন্দ।
এবার আর যাওয়া আসার পথে রিক্সায় আঁটোসাটো হয়ে নয় বরং জড়িয়ে ধরে বসি,
যেদিন তোমার ক্লাস থাকেনা তার আগের রাতে সারারাত কথা বলি,
মাসে একবার দেখাতো হচ্ছেই, তোমার হাতের সেমাই, নুডলস খাচ্ছি নিয়ম করে,
এভাবে আমরা দারুণ তুমুল প্রেম করে যাচ্ছি প্রতিদিন,
খুচরো করে বলতে গেলে আস্ত বই হয়ে যাবে।
এখন আর উচ্চতা নিয়ে কোন সমস্যা নেই তোমার,
তুমি বরাবরের মতো বলছো যে,
ছেলে মেয়ে পাশাপাশি দাঁড়ালে এইটুকু উচ্চতার তফাৎ বোঝা যায়না উল্টো মেয়েদেরই খাটো মনে হয়,
তোমার চোখে এখন আমি স্মার্ট, কিউট আর হ্যান্ডসাম।
তুমি স্পষ্ট মুখে তোমার মাকে বলে দিয়েছো আমাকে ছাড়া কাউকেই কোনদিন বিয়ে করবেনা,
আমার সবকিছু জেনে তোমার মা আমাকে এখন পছন্দ করেছে,
তোমার বাবাকেও তিঁনি বুঝিয়ে বলেছেন,
তোমার পরিবারের সবাই আমাকে মেনে নিয়েছে।
মাঝে মাঝে আমাদের পুরো দিন ঘোরা হচ্ছে, ফুচকা, আঁচার, চটপটি আরও কত কী খাচ্ছি আমরা, তুমি দারুণ খুশি,
তোমার সমুদ্রে ভয় তাই সময় করে পাহাড়ে ঘুরতে যাবো বলে ঠিক করলাম,
আরও কোথায় কোথায় যেন ঘুরতে যাবে বলে প্ল্যান ছিলো তোমার,
এখন দ্রুত সবগুলো ইচ্ছে বাস্তবে পরিণত হতে যাচ্ছে।
এখন আমার মাঝে তুমি ভবিষ্যত খুঁজে পেয়েছো,
আমার সাথে এখন চাইলেই বাকি জীবন কাটানো সম্ভব।
.
কল্পনা থেকে ফেরা যাক এবার,
আমার সত্যিই সরকারি চাকরি হয়নি, হবে বলেও পরিপূর্ণ আশা করা যায়না,
আমার মামা-খালু নেই যে একটা চাকরি কিনে নেবো, মেধাতো আরও নেই।
তবুও শুধু পরীক্ষাই দিয়ে যাচ্ছি,
তুমি বিরক্ত হয়ে রেজাল্টের কথাও জিজ্ঞেস করোনা,
তুমি আমার প্রতি দিনদিন চক্রবৃদ্ধিতে বিরক্ত হচ্ছো, কথায় কথায় রাগ দেখাচ্ছো,
ধমক দিয়ে কথা বলছো, আমি তোমার পরিবর্তনে ভয় পেয়ে কাঁদি,
তুমি ছিঁচকাঁদুনে বলে হাসো, আমি কাঁদলে মজা পাও।
তবুও তোমার সাথে কথা না বললে আমার মস্তিষ্ক শুকিয়ে যায়,
তুমি বোঝোনা আমি ঠিকই বুঝি,
তাই আমি বারবার তোমাকে ফোন-মেসেজ করি,
আর তুমি বলো আমার লজ্জা নেই, আমি থার্ড ক্লাস বাংলায় ছেঁচড়া।
.
আমাকে সুযোগ পেলে অপমান করো যাতে তোমার প্রতি বিরক্ত হয়ে সরে যাই,
কিন্তু সব অপমান মুখ বুঝে সহ্য করি কারণ তোমাকে আগের মতোই ভালোবাসি।
যখন দেখলে কিছুতেই আমি সরছিনা তখন তুমি বলে দিলে আমার উপর কোন অধিকার খাটাবেনা, এসব আমার একদম অসহ্য লাগে,
আমি আর কোন সম্পর্ক রাখতে চাচ্ছিনা, কোন ইন্টারেস্ট পাচ্ছিনা, তুমি তোমার রাস্তা মাপো,
তারপর একদিন সত্যি সত্যি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে।
আমার সরকারি চাকরি সত্যিই হয়নি, সম্ভাবনাও কম,
আমি তবুও চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকা যাচ্ছি...
.
০৭/১০/২০২১