কতকাল ধরে এই অচেনা ব্যস্ত যন্ত্রনগরীতে আছি,
যন্ত্রকলের মত নিয়মে সময়ে সময়ে মৃত্যুর কাছাকাছি।
দেখিনা কতদিন ধরে মায়ের মুখ খানি,
পাইনা আমি বাবার আদর; স্নেহের গাঁও খানি।।


আপন গেহ; আপন দিঘীর জল; আপন বটের ছায়া,
খুঁজে পাইনা আজ এইখানে ভাইয়ের আদর মায়া।
বোনের সেই দরদভরা ডাক; সেই প্রেম কোথায়?,
যেন বন্দি আজ মৃত্তিকা তলে আমি অনন্ত মূর্ছায়।।


এখানে এই দূর দেশে কেউ কান্নার শব্দ শোনেনা,
প্রশ্ন করেনা আপনজনের মত; কখনো কেউ না।
ঘড়ির মত সময়ের দেয়ালে আবদ্ধ সর্বক্ষণ,
মনে পরে বন্ধুদের সাথে বেহিসেবি সময়ের কথা; কাঁদে তাই মন।।


কি চাওয়া বুকের মাঝে চাপড়ে চাপড়ে আকুতিতে যায় মরে,
যেন কিছু পাওয়া নেই শূণ্যতায় জ্বলি বারেবারে।
কতদিন হলো দেখিনা উঠোনের কোনে ঝরা ফুল,
আজ বুঝি স্বর্গমাতৃভূমির সাথে এই যন্ত্রদেশের চলেনা কোন তুল।।


এখানের এই রাতগুলো নিরবতার মায়া ছড়ায় না,
ভোরের আলোতে শালিখ ফিঙ্গে গান ধরে না।
অচেনা এই ভূমি; অচেনা মানবদের পদচারণ,
নেই এথায় বিলের জল শাপলা; যেন সব হয়েছে হরণ।।


এখানে এই যন্ত্রনগরীতে নেই বোশেখসম প্রাণের উল্লাস,
স্থান নেই আবেগের কোন; নেই নির্মল বায়ু নিতে শ্বাস।
শতবার খুঁজেও পাইনি আপন মাটির গন্ধ একটিবার,
শুধু পাথরের অচেনা শক্ত চাহনিযুক্ত চোখ নিরাকার।।


বড় সাধ জাগে ইচ্ছে হলেই যদি আবার,
ছুটতে পারতাম চেনা পথের বাঁকে প্রতিবার।
সেই শুভ্র আকাশ ভোরে চলি জীবিকার খোঁজে,
ক্লান্ত দেহে ফিরি গভীর নিশিথে দেহ ঘামে ভিজে।।


চোখের পাতা ভিজে আসে নিদ্রাহীন রাতে,
গভীরে গল্প করি আকাশের চিরচেনা চাঁদের সাথে।
বলি চাঁদ কেমন আছে সবে কোন খবর নিয়ে এলি?,
চাঁদ বলে সুখে সবে শুধু মা তোর তরে তোর মত দিচ্ছে ভোগের বলি।।


মাগো তোমায় বলি চিন্তা করোনা কোন,
তোমার খোকা ভালোই আছে সর্বদাই তুমি জেনো।
বাবা তুমি ভেবোনা মিছে এইতো আসবো আমি,
শুধু কল্যাণ মাঙ দু'হাত তুলে আর ডাক অন্তর্যামী।।


সবেভাবে কত সুখের ঢেউয়ে সুখের ভেলায় চড়ি,
কেউ শুধায়না কত ব্যথায় ক্ষতে উপক্রমে মরি।
শুধু সোনার সুখের পায়রার খোঁজে,
আজ দূরের প্রবাসী হয়ে কাঁদি হারি নিজে।।


২৯-০৯-২০১৬


(কবিতাটি সকল প্রবাসীদের তরে উৎসর্গিত)