বোশেখের আজ কেটে গেছে কত
হয়ত দিনেক তের,
দুপুর বেলা মাঠ ফাটা রোদ
বিকেলে কি শুরু হলো!
আকাশ বুঝি করেছে রাগ
খুব হয়েছে দ্বন্দ্ব,
গোমড়া মুখে ফিরেছে পাশ
আজ হারায়েছে ছন্দ।
হঠাৎ করে উঠল ফুঁসে
ডাক গুড়ুম  গুড়ুম,
কালো মেঘে ছেয়েছে মাঠ
রোদ করেছে গুম।
বাজ পড়ছে বৃষ্টি ছাড়াই
বাতাস দিচ্ছে সঙ্গ,
গাছ গুলো সব নাচছে তালে
দুলছে সারা অঙ্গ।
আকাশ বেটা ভীষণ পাজী
রাগলে ধ্যান ভঙ্গ,
বোশেখ এলেই যেন সে
দেখায় শত রঙ্গ।
ব্যাঙ ডাকছে ডোবায় অবিরত
ডেকে ডেকে হলো সারা,
আধো জেগে আধো ডুবে তাদের
নিশ্চল হলো দাঁড়া।
ভীষণ বাতাস, ঝাপটা ধুলোর
ডাকে মেঘ গুড়ুম গুড়ুম,
ভয় পেয়ে তাই পালিয়ে গেছে
বাঁশঝাড়ের বুড়ো হুতুম।
দুপুর গড়ে বেড়েছে বেলা
বলবে কে এ সময় দিন,
ঘন মেঘের অন্ধকারে
ধরণী হলো আলোহীন।
গুড়ি গুড়ি শুরু হলো এবার
বৃষ্টির আনাগোনা,
বাতাস তার বাড়ায় গতি
আছে বুঝি অনেক দেনা।
ঝপ ঝপা ঝপ বৃষ্টি পরে
টিনের চালে বাজে মাদল,
মৃদঙ্গ তালে পুকুর জলে
নাচছে ক্ষুদিপানার দল।
দল বেধে যত হাঁস ছিল বিলে
ভিজছে বসে বসে,
কিশোর ছেলেরা কাদা জলে খুব
উঠছে খেলায় মেতে।
বড় বড় গাছে আম ধরেছে
বেজায় উঠেছে বেড়ে,
বৃষ্টির তোড়ে বাতাসের জোরে
উঠছে তারা নড়ে।
একটা পড়ল, দুইটা পড়ল
মুহূর্তে জমে গেল ভিড়,
আম কুড়তে কচিকাচা দলে
চেঁচিয়ে করছে অস্থির।
আধ পাকা ধানে লাগছে ভীষণ
বাতাসের ঝড়ো দোলা,
আর কটা দিন গেলেই ওরা
ভরাত কৃষাণের গোলা।
ঝড়ো বাতাস বুঝি নয় থামবার
বেজায় বাড়ায় বল ওই,
বাতাসের বলে আধ পাকা ধানে
কেউ দিচ্ছে যেন মই।
মেঘ ডাকে গুড়ুম গুড়ুম
বিজলি ওঠে চমকে,
বোশেখ ঝড় তাণ্ডব চালায়
ভুলে যায় দাঁড়াতে থমকে।
বোশেখ ঝড়ে নারুন বিবির
উড়ে গেছে ছনের চালা,
চালাহীন ঘরে ভিজছে বসে
বাড়ছে মনের জ্বালা।
শক্ত তার এমন ঘর
ফের নতুন ছাওয়াবার,
কষ্ট কত হয়েছে গত
করতে হবে আবার।
বাতাসের তোড়ে বারেক মুন্সির
আম বাগান হয়েছে লণ্ডভণ্ড,
ডালপালা কত ছড়ায়ে রয়েছে
এ নিয়ে বেধেছে দ্বন্দ্ব।
বোশেখ ঝড় শেষ হলে
আকাশ হলো সাদা,
কালো মেঘ সব উড়ে গেল দূরে
পথঘাট হলো কাদা।
পশ্চিম আকাশে এক টুকরো মেঘ
রয়েছে এখনো জুড়ে,
গোধূলি বেলার লাল আভা তার
বেরুচ্ছে বক্ষ ফুঁড়ে।
বাঁশ ঝাড়ে শত শালিক ডাকে
নীড় হারানো হাঁক,
দিন গেল কেটে সন্ধ্যে হলো
মুয়াজ্জিন দিচ্ছে নামাজের ডাক।
বোশেখ দিনে এমনি করে
প্রকৃতি দেখায় রূপ,
কতক ভালো কতক মন্দ
এতেই জ্বালায় প্রেম ধূপ।


রচনাকালঃ ২৬ এপ্রিল ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ