কবিতার প্রতি অনীহা বর্তমানে কবি কূলের একটা বড় দুঃশ্চিন্তার কারণ। কবিরা কবিতা লিখবেন আর তা কেউ পাঠ করবে না এ কি করে মানানসই হয়। প্রতিটি উৎপাদনের ক্রেতা অবশ্যই থাকতে হবে। যদিও কবিতার ক্ষেত্রে মূল্য বড় কথা নয় ভাবনা বা মনের আনন্দই অনেক বড় কথা। কবিরা পাঠক পেলেই খুশী হয়। কিন্তু বর্তমানকালে কাব্য পাঠকের বড়ই অভাব। টাকা খরচ করে তো কবিতার বই কেউ কিনতে চাই না।
এমন এক সময় ছিল যখন বিনোদনের কোন মাধ্যম ছিল না তখন গান বা কবিতা মানুষের মনোরঞ্জনের সহায়ক হতো। সেই কারণই রামায়ণ মহাভারত বা পরবর্তী কালে মঙ্গল কাব্য গুলি পয়ার ছন্দে গীতিকাব্য হিসাবে লেখা। যাহা সুর করে পাঠ করা হতো। দুই তিন দশক আগেও দেখা গেছে গ্রীষ্মের দুপুরে আটচালার বারান্দায় কিছু শ্রোতা নিয়ে কৃত্তিবাসী বা কাশীদাসী সুর করে পড়া হতো। কালক্রমে বেতার ও দূরদর্শন এলে পড়ার চেয়ে শোনার ও চাক্ষুষ দর্শনের আগ্রহ বৃদ্ধি পায় আর কাব্য পাঠের প্রবনতা কমতে থাকে।
      বর্তমানে অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতায় মানুষ এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে শিক্ষা ক্ষেত্র ব্যতিরেকে আর কেউ দশ মিনিটও বই পড়ার জন্য সময় দিতে চাই না। আবার এখন যুব সম্প্রদায় তো ইন্টারনেটের নানান সোস্যাল সাইটে মেতে আছে। অবসর কালীন সময় অতিবাহিত করাই তো কবিতা গল্প বা উপন্যাস পাঠের উদ্দশ্যে ছিল। সেই অবসরে বিনোদনের নতুন মাধ্যম ওয়াট্‌স এপ, ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম ও আরো অন্যান ব্লগে সময় অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে। তাহলে আর কবিতা পাঠ বা গল্প-উপন্যাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা পড়ছে কই।
   এখন কবি লেখকগণ অরন্য রোদনই করুন বা পস্তরে মস্তক ঠুকুন কাব্য পাঠক পাওয়া দুষ্কর। কবিতা কবিকূলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
      নিজস্ব অভিজ্ঞতায় অনুভব করতে পেরেছি যে কলেজ পড়ুয়া প্রতিটি ছাত্রই দুএক ছত্র কবিতা লিখে থাকে। কলেজে গিয়েই অধিকাংশ ছেলে মেয়েরা প্রেমে পড়ে। আর তারা চিরকুটের মাধ্যমে বা মোবাইলে ম্যাসেজ করে ছোট ছোট কবিতা লিখে প্রেম বিনিময় করে। সেই সময় তারা প্রেমের কবিতা লিখতে পড়তে খুব পছন্দ করে। এমন কি বাংলা কবিতা ডট কম থেকে আমাদের যে কবিতা চুরি হয় সে গুলিও সেই সকল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র গুলোই চুরি করে। অর্থাৎ সময়ের ধারায় অনেক কিছুই পাল্টে যায় বা পাল্টাতে হয়। কবিদেরকেও এবার বই না ছেপে পিডিএফ বই লিখে নিজস্ব ব্লগে প্রকাশ করতে হবে। আর ছবির উপরে ছোট বা মাঝারি মাপের কবিতা লিখে ফেসবুক ওয়াট্‌স এপ ছাড়তে হবে। সেক্ষেত্রে কবিতার পাঠের  চাহিদা বাড়তে পারে বলে আমি মনে করি। তাছাড়া কাব্য লিখে অর্থ উপার্জন করার মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে