ঈদ নিয়ে কিছু লিখবো ঠিক করেছি,
কিন্তু সময় পাচ্ছিলাম না।
বছরের এই দুটো দিন অন্তত পরিবারের সবাইকে এক জায়গায় পাওয়া যায়,
আর তার  মজাই আলাদা।


মনেমনে ভাবছি দিন যায়, বছর যায়,  
একেএকে পুরনোরা চলে যায়
আর নতুনেরা স্থান পায় সেই জায়গায়।


ছোটোবেলার ঈদটা ছিলো ভিন্ন রকমের মজার।
ঈদের দিনটা যাতে একটু লম্বা হয় এজন্য
খুব ভোরে উঠতাম।
ওদিকে রাতেও বেশিক্ষণ জেগে থাকার চেষ্টা করতাম।


ঈদের দিনে বাবাই আমাদের সব করে দিতেন।
যেমন গোসল করিয়ে কাপড় পরিয়ে পরিপাটি করে দেওয়া। ঈদের দিনগুলোতে মা ভীষণ ব্যস্ত থাকতেন রান্নাবান্নায়।


কুরবানীর ঈদে ব্যস্ততা থাকতো বাবার।
বাবাকে দেখতাম যে পশুরই কুরবানী হতো তা সমান তিন ভাগ করে দিতেন এবং ওখানেই সব বিতরণ করতেন। আমরা দুই ভাই-বোন চেয়ারে বসে দেখতাম।


এবার শ্বশুর বাড়ির কথা বলি
কেননা ওখানেই আমি আমার জীবনের
শ্রেষ্ঠ মজাগুলো করেছি।


একবারের কথা বলি, আমি থাকি চিটাগাং -এ
আর শ্বশুরবাড়ি খুলনা।
তাই যেতে হতো বড়োই ঝকমারি  করে।
কারণ পদ্মানদী পার হয়ে বেশ কষ্ট করেই যেতে হতো। এমনও হয়েছে ভোর ছয়টায় ফেরিঘাটে পৌঁছেছি আর বিকাল ছয়টায় ফেরি পেয়েছি।


তারপরও কোনো কষ্ট লাগেনি।
যখন বাড়িতে পৌঁছাতাম,
আনন্দের কোনো সীমা থাকতো না।
ফ্যামিলির সবাই  এক জায়গায় হওয়াটার
মজাই ছিলো অন্যরকম।


তো একবার কি হলো ঈদ করে ফিরছি সবাই একসাথে। বেশ কয়েকটা গাড়ী আমাদের একসাথে।
কিভাবে যেন ভাগ্যচক্রেই হয়তো...
বড়খালা শ্বাশুড়িকেও আমাদের সাথে পেয়ে গেলাম।
ভীষণ ভালো এবং মজার মানুষ তিনি।
আমার সৌভাগ্য হলো খালা শ্বাশুড়ি
যে গাড়ীতে আমিও সেই গাড়ীতে!


খালাশ্বাশুড়ি খুব নাদুসনুদুস একটা
গরুর দিকে তাকিয়ে থেকে বলেছিলেন,
গরুটার গোশ খেতে ইচ্ছা করছে।
খালার বলার স্টাইলাটা এতো সুন্দর আর মজার ছিলো যে, আমরা সবাই হেসে উঠলাম।
সারাপথে আমরা একটু করে ব্রেক
নিচ্ছিলাম আর মজা করছিলাম।


এবার ফেরিতে ওঠার পালা।
ঈদের সময় বুঝতেই তো পারছেন;
কে আগে উঠবে, তার রীতিমতো
একটা পাল্লা চলে নো ডিসিপ্লিন।


আমাদের চারটা গাড়ী ফেরিতে উঠছিলো।
এর মধ্যে আমাদের একটা গাড়ী ট্র্যাপে পড়ে গেলো।
আমি দেখলাম এইবার যদি ফেরিতে উঠতে না পারি
আর ফিরতে হবেনা বাড়ি, কখন পরের ফেরি পাবো তার কোনো ঠিক  নেই,কেউ কাউকে ছাড়বেনা।


সব বাচ্চাদের সাথে আমাদেরও মন খারাপ হয়ে গেলো।


হঠাৎ করে আমার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো।
যে গাড়ীটার জন্য  আমাদের গাড়ী ট্র্যাপে পড়েছিলো,
আমি তার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। তাছাড়া আমি আর কোনো উপায়ও দেখছিলাম না


ওই গাড়ীকে যদি ছেড়ে দেই তাহলে
লাইন দিয়ে সব গাড়ী উঠে যাবে।
আমি ওই গাড়ী আটকে বসে আছি,
তারা ভীষণ রেগে গেলো আর আমাকে বলছিলো,
"ম্যাডাম সরেন!" শুধু তাইনা, আমাকে একটু করে গাড়ী দিয়ে ধাক্কাও দিচ্ছিলো,
কিন্তু পরিস্থিতি যাই হোক আমি আমাদের  
গাড়ী ফেরিতে উঠিয়ে তারপর ক্ষ্যান্ত হয়েছিলাম।


আমরা সম্ভবত বিশজনের উপরে ছিলাম।
কাজটা সম্পন্ন করার পর আমি খুব লজ্জা পাচ্ছিলাম,
কারন আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন কি ভাবছে।
আমি লাজুক বদনে খালা শ্বাশুড়ীর পাশে গিয়ে বসতেই, খালা বলে উঠলেন, "মুন্নি, আজ তুমি কি দেখালে!" খালাকে বললাম, "খালা ভীষণ লজ্জা লাগছে।" মুখের কথা কেড়ে নিয়ে খালা বললেন, "সাবাস মুন্নি।
তোমাকে ছাড়া আমরা আজ ফেরিতে উঠতেই পারতামনা। আরো বললেন, "আমাদের বউ মস্তানীও বটে!"


একটু বলে রাখি, আমার বড়খালা শ্বাশুড়ি শিক্ষকতা করতেন। আমার  কাছে ওই ঈদ সবসময় স্মরনীয় হয়ে থাকবে।


আজ খুব শ্বশুর-শ্বাশুড়ির কথা খুব  মনে পড়ছে।
তাঁদের কারণেই আমরা কষ্টকে কখনো কষ্ট মনে করিনি, ছুটে চলে গিয়েছি। তাঁরা আজ কোথায়! আর কখনো কোনো কিছুর বিনিময় ফিরে পাবোনা।


আজ সেই জায়গাতে আমরা অপেক্ষায় থাকি
কখন বাচ্চারা আসবে আর ঘরটাকে
আনন্দময় করে তুলবে।


এভাবেই হয়তো অগ্রজরা আমাদের জায়গা করে দেন। আমাদেরও একদিন জায়গা ছেড়ে দিতে হবে,
নেক্সট যারা আছে তাদের জন্য।