আমি করোনার কাছে হারিনি
বেঁচে থাকার ছিল অটুট মনোবল,
হেরেছি পদে পদে অমানুষের কাছে
তাইতো হয়েছি আজ বেওয়ারিশ লাশ!
করোনা পজিটিভ রেজাল্টে পাল্টে গেলো সব  
সব মানে আমার ভালোবাসার গোটা পৃথিবী।
হোম কোয়ারান্টিনে সেবাহীন নিঃসঙ্গ ভোগান্তি,
তবুও বৌ ছেলে মেয়ে সুস্থ থাকুক।
একটু গরম পানি দাও, শোনোনা একটু চা দেবে!
কইগো তোমরা? ভাপ নেয়ার সময় হয়েছে,
ডেকে ডেকে গলা বসে গেলো, কারো সাড়া নেই।  
মরণঘাতী ব্যাধি, ভয়তো পাওয়ার কথা
তাই বলে কিছু না জানিয়েই ওরা পালালো?
রোগ যন্ত্রণার চেয়ে প্রিয়জন পরিত্যক্ত করার কষ্টে
ভেঙে খানখান হওয়ার আর্তনাদে ক্ষুধার্ত নিস্তেজ;
নির্ঘুম সারা রাত মৃত্যুর ভয়ে মরেছি বারংবার।
তায়াম্মুম করে ফজর নামাজ পড়েছি শুয়ে,
স্বার্থপর দুনিয়ায় বাঁচবার ফরিয়াদের চেয়ে
ভেবেছি শহীদি মৃত্যুই অনন্ত সুখময়।
ঔষধ শেষ, শ্বাস কষ্ট ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে,
নির্জন বাসায় মারা গেলে লাশ পচে কংকাল হবে
হাসপাতালে চিকিৎসা না দিলেও,
বেওয়ারিশ লাশের দাফনতো হবে!
ফোন করতেই পুলিশ ও এম্বুলেন্স এসে নিয়ে গেলো,
আইসোলেশন ওয়ার্ডে অবস্থার অবনতি,
আর শ্বাস নিতে পারছি না, অক্সিজেন নেই
যাদের জন্য ব্যাংকে টাকা জমিয়েছি,
তারা এসেতো বলবেনা আইসিইউতে নাও!
জোর করে পানির নীচে কেউ যেন মাথা চেপে ধরছে,
আর বুঝি সময় নেই, ঘেমে একাকার...
আহারে কেউ কাছে নেই, এমনকি ডাক্তার ও নার্স,
নিঃসঙ্গ শেষযাত্রায় ক্ষনিকের জন্য চোখে ভেসে উঠলো
কার জন্য কি করেছি, কাদের সুখের জন্য কষ্ট করেছি
কার জন্য নিজ স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছি।
বিনিময়ে কিচ্ছু পেলাম না, সাথী হলো নিজের আমল।
প্রশান্তির খুব জোরালো এক ঘুমে আচ্ছন্ন,
কাফনের মতো পিপিই পরিহিত ক'জন
জানাজা ও দাফন করলো, হায়রে কপাল!
একটুকরো শুকনো কবরও জুটলোনা,
ভাসে মোর লাশ, ডুবানোর অক্লান্ত প্রচেষ্টা!
যার যার কর্মফল ফল দেখো প্রতিদান দিবসে।
চোখ বন্ধ করে একটু ভাবো হে গাফেল!  
অনুভূতিতে নাড়া দেয় কি?
লজ্জাহীন মানবতার মুখে চুনকালি,
রুহবিহীন এ শরীর মূল্যহীন যাযাবর...