[মহানবী (সাঃ) এর ঐতিহাসিক বিদায় হজ্বের ভাষণ অবলম্বনে]


লক্ষাধিক সাহাবা কেরাম (রাঃ) সমবেত ময়দানে আরাফায়  
প্রিয় রাসূলের (সাঃ) ভাষণ শ্রবণে উম্মুখ শান্তিময় নীরবতায়।

বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সাঃ) জাবালে রহমতে করেন আরোহন
শোনাতে বিশ্ব মানবতার মুক্তির সনদ বিদায় হজ্বের ভাষণ।

আল্লাহর প্রশংসা ও একত্ব বর্ণনা শেষে নবীজি (সাঃ) ফরমান
হে জনমণ্ডলী, আদম  হাওয়া থেকে সৃষ্টি বলে সকলে সমান।


আরব-অনারব ও সাদা-কালো কেউ নও কারো চেয়ে মন্দ
আল্লাহর চোখে খোদাভীরুতা শ্রেষ্ঠত্ব ও সম্মানের মানদণ্ড।


হে সমবেত জনতা, কথা গুলো শোন মনোযোগ সহকারে
আগামী হজ্বে তোমাদের সাথে মোর দেখা নাও হতে পারে।


এদিন ও মাসের মতো পবিত্র জেনো তোমাদের জানমাল  
প্রভুর দরবারে যতক্ষণ না মিলিত হবে, সেই অবধি কাল।

প্রতিদান দিবসে নিশ্চিত জিজ্ঞাসিত হবে সবার আমল
সে বার্তা আমি পৌঁছে দিলাম, শোনো হে মানব সকল!


ফিরিয়ে দাও তোমরা প্রাপকের গচ্ছিত সকল আমানত
করবেনা কারো ধন সম্পদের কোনো প্রকার খেয়ানত।


করোনা অত্যাচার কারো প্রতি, হয়োনা অত্যাচারিত  
জাহেলী যুগের সকল রক্তের দাবী করা হলো রহিত।


মূলধন বহাল রেখে হারাম হলো সুদের আদান প্রদান
দ্বীনের তরে শয়তানের ধোঁকা হতে থাকবে সাবধান।


পবিত্র মাসের রহিতকরণ হলো অন্ধকার যুগেরই ধারা
আল্লাহর দেয়া বারো মাস করেনা পছন্দ অবিশ্বাসী যারা।


স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের প্রতি আছে বৈধ সম অধিকার
সতীত্ব বাঁচাও নারী আর শ্রেষ্ঠ সে পুরুষ কয় স্ত্রী যার।

আমার সকল কথা ভালোভাবে করো সবাই অনুধাবন
হবেনা বিপথগামী যদি করো কোরান-সুন্নাহ্ অনুসরণ।


ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ মুসলমান মুসলমানের ভাই
জবর দখল নয়, খুশি মনে দিলে কিছু বৈধ হবে তাই।


একের অপরাধে অন্যকে দেয়া যাবেনা কোনো দণ্ড
যোগ্য নেতার হয়ো অনুগত যদিও চেহারা হয় মন্দ।


ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি হানাহানি হতে থেকো সাবধান  
পূর্বে বহু জাতির এ কারণে হয়েছে বিনাশ অবসান।


ধর্মভ্রষ্ট হয়ে অন্যের সাথে করোনা সংঘর্ষ রক্তপাত
তবে বিশ্ব মুসলিম ভাইয়ের বন্ধন হবে যে নিপাত।


পড়বে নামাজ রাখবে রোজা করবে প্রদান জাকাত
হজ পালন ও নেতার আনুগত্যে পাবে যে জান্নাত।

দুর্বল ও গরীবের উপর করবেনা কভু কোনো অত্যাচার
শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগে মজুরি না দেয়া অবিচার।


দাস-দাসীদের দিও তাই যা করো তোমরা আহার পরিধান
মাফ করে ভালোবাসলে পাবে খোদার ক্ষমা-দয়া অফুরান।  


যার মুখ এবং হাত থেকে নিরাপদ সবাই, সেইতো মুসলমান
ঈমানদার সে লোক, যার হাতে বিপদমুক্ত সকলের ধন-প্রাণ।


নও পূর্ণ মুমিন, পড়শী অভুক্ত রেখে দুবেলা পেট পুরে খেলে
হবে না মুসলমান, নিজের ও পরের জন্য পছন্দ এক না হলে।


নিজ বংশের বদলে অন্য বংশের বলে পরিচয় করলে প্রচার
তার উপর অভিসম্পাত -ফেরেশতা, মানবকুল ও আল্লাহর।


মনিব ছাড়া অন্যকে যে মনিব বলে তার ওপর খোদার লানত
সকল ঋণই পরিশোধ যোগ্য এবং ধারকৃত বস্তূ দেবে ফেরত।  


হে লোক সকল, মনোযোগ দিয়ে শোনো চারটি কথা আমার
স্মরণ রেখে করোনা কখনো শিরক, হত্যা, চুরি ও বেভিচার।


আমার উম্মতের মাঝে যে কলহ বাঁধায়, বুকে করো তারে প্রহার
বিভেদকারী জাহান্নামী, বরকত পেতে একত্রে করো সবে আহার।


পাঁচটি আদেশ মেনে করো- একতা রক্ষা, অনুগত থেকো নেতার
শ্রবণ করো উপদেশ, প্রয়োজনে হিজরত, সংগ্রাম  রাহে আল্লাহর।


মোদের নিযুক্ত শাসক পাবে তার যথাযথ ভরণ-পোষণ  
তাই অবৈধ অর্জন ঘুষ বলে গণ্য হবে মহাপাপ তা গ্রহণ।


ত্যাগ করো সবে হিংসা বিদ্বেষ যা করে ধ্বংস ব্যক্তির সৎ গুণ
যেমনি ভাবে জ্বালানী কাষ্ঠকে পুড়িয়ে ভস্মিভুত করে আগুন।


কাজের বিনিময়ে খাদ্য আহরণ ছাড়া উত্তম খাবার নাই  
ভিক্ষা নয় পরিশ্রমের অর্জন সেরা, পছন্দ আল্লাহর তাই।


আল্লাহর দরবারে নিজ আমলনামা পড়বে জনে জনে
কেউ কারো উপকারে আসবেনা রেখো সে কথা মনে।


শহীদের রক্ত হতে বিদ্বানের কলমের কালি মহামূল্যবান
মুসলিম নর ও নারীর জন্য ফরয দ্বীনি এলেম অনুসন্ধান।


মাতা-পিতার খুশিতে হয় খুশি, দুঃখে হন দুঃখী খোদা  
মায়ের পদতলে তোমাদের বেহেশত মনে রাখবে সদা।


আচরণ করো ঐরূপ যেমন অন্য থেকে করো তুমি কামনা
পরোপকার করবে যে জন তোমাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ সে জনা।  


অনাগতের কাছে তোমরা পৌঁছে দিও মোর এ ভাষণ  
তাদের অনেকে হয়তো করবে এর অধিক সংরক্ষণ।


শ্রবণ করো হে লোক সকল, আমি হলাম আখেরী নবী
ঐশী জ্ঞানের থাকতে ধারা মোর কাছে নাও শিখে সবি।


ধর্ম ও অনুগ্রহ পূর্ণতার ওহি এলে নবী জবানে হলো বয়ান
মনোনীত করেন খোদা দ্বীন ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।

আমি কি রিসালতের হক করেছি আদায় জিজ্ঞাসিত হলে কভু
জনতার কণ্ঠে 'হ্যাঁ' জবাব শুনে রাসূল কহে সাক্ষী থেকো প্রভু।
  
আবেগ মাখা কণ্ঠে নবীজি (সাঃ) বলেন, বিদায় ও বন্ধুগণ বিদায়!
মর্মাহত লাখো সাহাবা কয় বিদায় আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তোমায়!



তথ্য সূত্র : (১) আল-কোরআন, সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ০৩ (২) সহীহ বুখারী (৩) মুসলিম শরীফ (৪) মুসনাদে আহমদ (৫) সুনানে ইবনে মাজাহ (৬) জামে তিরমিযি (৭) সিরাতে ইবনে হিশাম (৮) মুসনাদে দারেমী (৯) জামহারাতুল খুতাবিল আরাব (১০) বিশ্বনবী- গোলাম মোস্তফা (১১) সীরাতুন নবী (সা.)- ইবনে হিশাম (র.)  (১২) আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া- ইবনে কাসীর (র.)।