হিমু,
আজ শহরটা যেন তোমার হলুদ পাঞ্জাবির অভাবে ফ্যাকাশে।
রাস্তা ঘাটে মানুষের ভিড়, কিন্তু কেউ নেই যে খালি পায়ে হাঁটে—
কেউ নেই যে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসে,
হাসতে হাসতে বলে— “মানুষ শুধু পাগল হলে সত্যি কথা বলে”।

তোমার মত করে কেউ আর দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে থাকে না,
চোখের পাতা ঝিমিয়ে বলে না—
"মায়া, সব মায়া।"
এই শহরটা বড্ড হিসেবী হয়ে গেছে,
বুক পকেটে ক্যালকুলেটর,
চোখে লোভ, মগজে সংকোচন।
আর তুমি ছিলে উল্টো দিকে হাঁটা এক দর্শন—
যার পৃথিবীটা বাস্তবের ছায়ায় নয়,
স্বপ্নের আলোয় জ্বলে উঠতো।

আজ তোমাকে ভীষণ মিস করছি, হিমু।
একটা অলস দুপুরে হিমেল বাতাস বয়ে যায়,
আর আমি ভাবি, যদি তুমি থাকতাে—
হয়তো বলতাে, “এই বাতাসটাও একদিন মরে যাবে, তবু আজকের হাওয়া বাঁচুক।”

মনে আছে, তুমি বলেছিলে—
মানুষের মন আসলে একেকটা ট্রেন স্টেশন,
কেউ আসে, কেউ যায়, কেউ শুধু দাঁড়িয়ে থাকে।
তোমার সেই অদ্ভুত দর্শনে আমি প্রেমে পড়েছিলাম—
এক পাগল দার্শনিকের,
যার হাতে বই নেই,
কিন্তু মনে একটা মহাবিশ্বের মানচিত্র।

তুমি কি এখনো রাত জেগে পথ হাঁটো?
বেওয়ারিশ কুকুরের সাথে কথা বলো?
মানুষের চোখে চোখ রেখে সত্যের বিস্ফোরণ ঘটাও?
তোমার সেই পাগলামো আর প্রশ্নবিদ্ধ জীবনটা
আমার মতো হিসেবি, ব্যস্ত, ভীত মানুষের জন্য ছিলো
একটি মুক্তির জানালা।

হিমু,
তোমাকে ছাড়া এই পৃথিবীটা বড় নিস্তরঙ্গ,
শব্দ আছে, কিন্তু সুর নেই।
চোখ আছে, কিন্তু স্বপ্ন দেখার সাহস নেই।
তুমি ছিলে সেই অনিশ্চয়তার দরবেশ—
যার সবকিছু হারিয়ে ফেলার পরেও কিছু হারায়নি।
তোমার মতো করে আমি আজও ভাবতে পারি না,
তবু চাই, যেন একদিন তোমার মত নিঃস্ব হয়ে উঠি—
তোমার মত অদ্ভুতভাবে ধনী হয়ে যাই।

যদি কখনো আবার দেখা হয়—
হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে এসো, খালি পায়ে।
আমি এক কাপ চা হাতে দাঁড়িয়ে থাকবো—
আর বলবো— “কেমন আছো হিমু?”

ভালো থেকো, অদ্ভুত তুমি।
—তোমার নিঃশব্দ পাঠক