কেউ কেউ বলেন, মানুষ আর আগের মতো কবিতা পড়ে না। আমাদের এই দ্রুতগতির সময়ে, যেখানে প্রযুক্তি আর তথ্যের স্রোতে মানুষ ডুবে আছে, সেখানে কবিতার স্থান কোথায়? কিন্তু এই ধারণাটা কি সত্যিই পুরোপুরি ঠিক? আমি বিশ্বাস করি না। কারণ পৃথিবীতে এখনো প্রেম বেঁচে আছে, পৃথিবীতে এখনো যুদ্ধ হয়—আর যতোদিন প্রেম থাকবে, যুদ্ধ থাকবে, ততোদিন কবিতাও থাকবে মানুষের হৃদয়ে, গভীরভাবে, জীবন্তভাবে।
কবিতা হলো হৃদয়ের স্বাভাবিক উচ্চারণ। প্রেমে পড়লে মানুষ যেমন ভাবে, যেমন কাঁপে, যেমন আনন্দে বা যন্ত্রণায় ডুবে যায়—সেই আবেগই রূপ পায় কবিতায়। প্রেমের প্রথম স্পর্শ থেকে শেষ বিদায়ের দীর্ঘশ্বাস পর্যন্ত, কবিতাই সেই অনুভবের ভাষা। মানুষ যখন কাউকে ভালোবাসে, সে বোঝাতে চায় এমন কিছু যা কথ্য ভাষায় ধরা যায় না—তখন কবিতাই হয় তার আশ্রয়।
অন্যদিকে যুদ্ধ—এও এক প্রবল আবেগ, প্রবল বাস্তবতা। যুদ্ধ মানেই ধ্বংস, হাহাকার, প্রতিরোধ, স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা। যুদ্ধের বেদনা, ক্ষয়, আর প্রতিবাদের ভাষাও কবিতাই। নজরুল ইসলাম, পাবলো নেরুদা, উইলফ্রেড ওয়েন—এরা সবাই কবিতাকে অস্ত্র করে তুলেছেন যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড়াতে।
কবিতা শুধু রোমান্টিকতার আশ্রয় নয়; এটি প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও মানবতার বার্তাবাহক। তাই প্রেম যেমন কবিতার জন্ম দেয় কোমল আবেগ থেকে, যুদ্ধ দেয় কঠোর বাস্তবতা থেকে। দুটোই মানুষকে নাড়া দেয়—একটি হৃদয় দিয়ে, অন্যটি মনুষ্যত্ব দিয়ে। আর যতদিন এই দুটি শক্তি—প্রেম ও যুদ্ধ—পৃথিবীতে থাকবে, ততদিন কবিতা তার অর্থ হারাবে না।
আজকের পৃথিবীতে মানুষ হয়তো সোশ্যাল মিডিয়াতে ডুবে, কিন্তু সেই প্ল্যাটফর্মেই প্রতিদিন হাজারো কবিতা জন্ম নেয়, শেয়ার হয়, হৃদয়ে স্থান পায়। হাজারো মানুষ এখনো তাদের আবেগ প্রকাশ করে কবিতার ভাষায়, হয়ত ছন্দে না, তবুও কবিতার চেতনায়। তাই কবিতা হারিয়ে যাচ্ছে না, বরং রূপ পাল্টে, নতুন মাধ্যমে, নতুন আঙ্গিকে আজও বেঁচে আছে।
এই জন্যই বলা যায়—
“প্রেম আর যুদ্ধ যতদিন আছে, কবিতাও আছে ততদিন।”
কারণ কবিতা মানুষের সেই আত্মার ভাষা, যা অনুভব করে, ব্যথা পায়, ভালোবাসে—এবং কখনো হার মানে না।