"প্রিয় কবিতা — এক নিরবতার আর্তি"
এক সময় কবির কলম ছিল জোয়ারের মতো, শব্দে শব্দে জেগে উঠতো বর্ণময় জীবন। শহরের গলি, রাস্তার কোলাহল, মানুষ, প্রেম, বিচ্ছেদ—সবই ছিল তার কবিতার রসদ। কিন্তু হঠাৎ যেন সব থেমে যায়। কলম বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। শব্দেরা আর আসে না। অনুভূতিরা চুপচাপ কোনো কোণে কাঁদতে থাকে। কবি বুঝতে পারে—তার ভেতরের নদী শুকিয়ে যাচ্ছে।
এই নিরবতা শুধু তার নিজের নয়, শহরটাই যেন এক বিষণ্নতায় ডুবে আছে। ইট-পাথরের দেওয়াল, কংক্রিটের ছাদ, গাড়ির হর্ন, ধোঁয়া—সব কিছু তার কবিতাকে ক্রমে শুষে নিচ্ছে। সৃষ্টির জন্য যা লাগে—নিরবতা, নিবিষ্ট মন, প্রকৃতির স্পর্শ, সে সব কিছু শহর তাকে দিতে পারছে না।
কবি ভাবে—“প্রিয় কবিতা, তুমি কি শুধুই শব্দ? নাকি তুমি নিঃশ্বাসও চাও, সবুজের গন্ধ, জলের শব্দ, পাহাড়ের ছায়া?” এই প্রশ্ন তাকে টেনে নিয়ে যায় শহরের বাইরে, দূরে কোথাও—যেখানে পাহাড় কথা বলে, সাগর ঢেউয়ে গান গায়, বাতাসে ঘাসের ঘ্রাণ ভাসে।
প্রকৃতি তখন হয়ে ওঠে কবির নতুন আশ্রয়। একাকী পাহাড়ের কোল, নদীর ধার, কিংবা সাগরের ঢেউয়ের নিচে সে খুঁজে পায় হারিয়ে যাওয়া শব্দদের। কলম আবার সচল হয়, কাগজে আঁকা হয় অনুভব। কারণ প্রকৃতি শুধু দৃশ্য নয়—এ এক চেতনা, যা কবির ভেতরের স্তব্ধতাকে জাগিয়ে তোলে।
এই আলোচনায় স্পষ্ট করতে চাই, কবিতা লেখার জন্য শুধু মেধা নয়, উপযুক্ত পরিবেশ, মানসিক প্রশান্তি ও প্রকৃতির সংস্পর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শহরের যান্ত্রিক জীবন একসময় কবির সৃজনশীলতাকে রুদ্ধ করে দেয়। তখন সে প্রকৃতির কোলে ফিরে গিয়ে খুঁজে পায় নিজের ভেতরের কবিতাকে—নতুন করে, আরও গভীরভাবে।
“প্রিয় কবিতা” শুধু একটি শব্দগুচ্ছ নয়, এটি কবির আত্মা। যখন শব্দ হারিয়ে যায়, তখন প্রকৃতিই হয় তার অনুপ্রেরণা। একজন কবির জন্য পরিবেশ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতি না থাকলে কবিতা যেমন অসম্পূর্ণ, তেমনি কবিও একরকম মৃত। তাই কবিতা ফিরে পেতে, কবিকে ফিরতে হয় মাঝেমাঝে প্রকৃতির কাছে—সবুজ, পাহাড়, সাগর আর পাখির নীড়ে।