‘আওয়ামী অপশাসন আর চণ্ডালদের রাজনীতিতে বিরক্ত আর ঘৃণায় বছর দেড়েক আগে লেখা এসব। সেই বিরক্তি, ঘৃণা দুটোই এত বেশি বেড়েছে যে, নতুন করে কিছু লিখতেও বিরক্তি…’


সুন্দরীতমা আমার!
যদিও এখন দেশ রসাতলের তলানিতে পৌছে গেছে
গণতন্ত্রের নামে দেশে চলছে নব্য বাকশাল
নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের সন্ত্রাস।
তবুও এখনও আমার প্রতিটি ঘুমহীন রাতে
রাতের চাঁদকে তোমার মুখাবয়ব ভেবে ভ্রম হয়!


এই চাঁদ ডুবে যাক, বা মেঘে ঢেকে যাক
যাই হোক-
অশরীরী হয়ে এলেও আমার নির্জন জানালায়
প্রতিটি গহীন রাতে তোমাকে আসতেই হবে।


গুম আর হত্যার আতঙ্কে আতঙ্কিত নিরীহ জনতা
সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় সন্ত্রস্ত্র রাজনীতিবিদরা।
সুখী দেশের তালিকায় নাম এলেও
দেশের মানুষের মুখে হাসি নেই!
তবুও আমার প্রতি পদক্ষেপেই
অবচেতনে তোমার হাসি আমাকে দিকভ্রান্ত করে দেয়,
দেশের কোনো মানুষের মুখে হাসি না থাক
মিথ্যা করে হলেও প্রতিনিয়ত তোমায় এমনি করে
হেসে উঠতে হবে প্রিয়তমা।


অনাবৃষ্টি আর খরায় কৃষকের আহাজারি বেড়েছে
মানুষের চোখের বন্যায় হৃদয় প্লাবিত হচেছ প্রতিনিয়ত,
তাই সত্যিকারের অসময়ের বৃষ্টি এলে
বৃষ্টিকণাকে তোমার অশ্রু ভেবে বিষন্নতা আসে।
এরপর বৃষ্টি হলে তোমাকে
উম্মাতাল বারিবর্ষণের মাঝে হঠাৎ করে
রোদ হয়ে উঠতেই হবে মহারাণী।


দ্রব্যমূল্যের আগুন আর সিন্ডিকেটের শিকলে
মানবতা আর আমজনতা এখন বন্দী
৭৪’র দুর্ভিক্ষের স্মৃতি উকি দিচ্ছে হঠাৎ হঠাৎ।
গ্রীষ্মের এই তাপদহে জীবন বিপন্ন হলেও
বুকের ছাতি ফেটে কাঠ হলেও,
কালবৈশাখী হয়ে আর একবারও নয়
তোমাকে আগাম বর্ষা হয়ে আসতেই হবে প্রেয়সী।


জীবিকার অন্বেষণে হন্যে হয়ে ঘোরা বেকারের তালিকা
দিন দিন লম্বা হচ্ছে,
প্রাসাদ্যোদম বাড়ি গড়ছে মন্ত্রী সাংসদেরা সবাই
হতাশায় মিইয়ে যাচ্ছে অসংখ্য সৃষ্টিশীল প্রাণ
শুকিয়ে যাচ্ছে অজস্র তাঁজা ফুল।
আমার মনের কুড়িগুলো শুকিয়ে যাবার আগেই
তোমাকে উঞ্চ সানিধ্য দিয়ে তাকে ফের
জাগিয়ে তুলতেই হবে প্রিয়তমা।


ফেসবুক আর ব্লগ ভাইরাসে
তরুণেরা যখন আক্রান্ত,
ফোনে ক্ষুদেবার্তার শুভেচ্ছা উঠে যাবার উপক্রম
সৌজন্যতার কোনো বালাই আর অবশিষ্ট নেই।
তখন আমার ভাবনার নিরস বিকেলে
তোমাকে উদাসিনী হতেই হবে,
রোজ রোজ আমাকে উদ্দেশ্য করে লিখতে হবে প্রেমপত্র।


রাজপথের যানজট, ব্যাংকের তারল্য সংকট
আর অনিয়মের বেড়াজালে সবাই যখন মুমূর্ষূ,
তখন একটি অনাথ শিশুর ভিক্ষার থালায়
বেকার পকেটের দুই টাকা দানের কারণে
আমার পিঠ চাপড়ে দেবার জন্য
আমার পাশে যখন তখন তোমাকে এসে বসতেই হবে বন্ধু।


পরিবেশের অবক্ষয় আর সীসার এই নগরীতে
অব্যবস্থাপনা যতই বাড়তে থাকুক,
শীতের শৈত্যে, বসন্তের সমীরণে
আমার সকল ব্যস্ততা আর নিরুদ্দেশ সত্ত্বেও-
আমার সাথে দেখা করার জন্য
তোমাকে রাস্তার মোড়ে সকাল-বিকাল
অপেক্ষা করতেই হবে হৃদয়নারী।


জঙ্গী হামলার গালগল্প আর সরকারী গুন্ডার ভয়ে
নিরীহ মানুষ যখন তটস্থ,
রাজনৈতিক সন্ত্রাস, ভাংচুর মিছিল কিংবা কার্ফ্যুতে-
তোমাকে উৎকন্ঠা নিয়ে বার বার জানতে হবে আমার খবরাখবর।


নব্য মনন্তর দুর্নীতি আর অনাচারে দেশ ছেয়ে গেছে
ফকিরদের নামে বরাদ্দ টাকায় উদরপূর্তি করে
ধনীরা ব্যাংকে জমিয়েছে লাখ ডলার।
তবুও আমার মিতব্যয়িতা আরও মিত্যবয় হলেও
বারবার তোমাকে যেচে জেনে নিতে হবে
অভাবী আমার কি চাই।


আওয়ামী অপশাসন বেড়েছে, শেয়ার বাজারের মৃত্যু ঘটেছে
আরও টাটকা হয়েছে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার তালিকা!
মেধাহীন জাতি গড়তে সরকারী চাকরিতে বেড়েছে কোটার হার!
তবুও প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধে জয়ী হবার জন্য
আমার চোখে তাকিয়ে তোমাকে উৎসাহ দিতেই হবে রাণী।


দেশজুড়ে যতই বাড়ুক হত্যা, ধর্ষণ জালিয়াতি
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ যতই বাড়াক নৈরাজ্য
গণমাধ্যমের টুটি যতই চেপে ধরুক সরকার
বিনা চিকিৎসায় মারা যাক মুক্তিযোদ্ধারা!
ততই তোমাকে আমার প্রতি আরও বেশি
মনোযোগী হয়ে উঠতেই হবে বন্ধু।


ধান্ধাবাজ বুদ্ধিজীবী, বেঈমান আর উপদেষ্টা-সুশীলেরা
যতই শুষে খাক দেশের রক্ত
বাংলার দিকে যতই বিস্তৃত হোক সাম্রাজ্যবাদী ভারতের
লোলুপ দৃষ্টি।
দলবাজ আর বিতর্কিতদের দেয়া হোক সম্মাননা
কবিরা যতই হয়ে উঠুক বেহায়া, চরিত্রহীন!
তবুও আমার জন্য তোমার অপেক্ষা কখনোই
শেষ করা চলবেনা প্রিয়তমা।


সাংসদেরা হয়েছে হিংস্র আর নির্লজ্জ
সংসদ হয়ে উঠেছে বণিকদের হাট।
পর্ণোগ্রাফি আর অশালীনতার ক্রমবৃদ্ধি ঘটে চলেছে
প্রতিনিয়ত।
তবু আমার দুর্বল হাতটা তোমাকে শক্ত করে ধরতেই হবে আবার।


সম্প্রীতির এই দেশে ধর্মের বিভেদ মুছে গেলে
রামুর ক্ষত মুছে যাবার পরে-
তারপর কোনো এক উৎসবে পহেলা বৈশাখে,
ভালবাসা দিবস কি বিজয় দিবসে
অথবা বইমেলার লোকারণ্যে,
ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল জিতে গেলে
রাজধানীর ফুটপাথ ধরে-
অজস্র মানুষের ভিড়ে,
আমার হাতে হাত রেখে
তোমাকে অনেক পথ হাঁটতেই হবে প্রিয়তমা।


এসব তোমাকে করতে হবে
সব অনিয়ম, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, বেঈমানি, পর্ণোগ্রাফি
আর কোটার বিস্ফোরণের পূবেই।
ততদিনে তোমার-আমার বয়স যতই
বৃদ্ধি পাক, পাক!


কেননা মোসাদ, র, সিআইএ আর পুঁজিবাদ
যেখানে নির্ণয় করে দিচ্ছে বাংলাদেশের ভাগ্য!
যেখানে সিডর আক্রান্তরা এখনও ত্রাণের
বরাদ্দ না পেলেও থ্রিজি সুবিধা পেয়েছে!!
সেই অমানিশায় তুমি ছাড়া আমার আর
কে আছে বল?


ঢাকা, ২৩-২৪.১০.১২ ইং।