মা,
মেকি রঙ আর মিথ্যে কথার এই শহরে
ভালো থেকেও আমি ভাল নেই,
চারপাশের হতাশা আর প্রবঞ্চনা
মিথ্যাচার, সন্ত্রাস, অব্যবস্থাপনা আর অনিয়ম-দুর্নীতি,
সোডিয়াম লাইটের এই শহরে ভাল থাকা কঠিন।


নিত্যব্যস্ত নিয়ন আলোর এই রাজধানীতে, জননী আমার
তোমার মুখখানা অনর্নিশ মনে পড়ে।
গ্রামের মাটির মেঠোপথ, কাশবন, ধানক্ষেত
বিলের শুকিয়ে যাওয়া জলাধার আমায় হাতছানি দেয়-
তবুও আর্থিক দৈন্য
অনিয়মের এই অভিজাতপাড়ায় আমায় বেঁধে রাখে।


চোখ ধাধানো এই জৌলুশের শহরে শত ধনীদের বাস
এ নিয়ে তোমার নিত্য কৌতুহল।
মা আমার-
আমার মতো লাখো দিন আনে-দিন খায় চাকুরে ছাড়াও
টিউশনি করে পায়ে হেঁটে চলা লাখো তরুণের বাস এই শহরে
ফুটপাতে ঘুমায় হাজারো নিঃস্ব,
অনেকটা আমাদের বাড়ির বাইরে ঘুমানো কুকুরের মতো।


আবার এই শহরেরই কারো কারো ঘরে
টাকা রাখার জায়গা নেই
দেশের ব্যাংকগুলো ভরে আছে নগদ অর্থে
এমনকি সুইস ব্যাংক জমে ভারী আমাদের টাকায়
সুনির্দিষ্ট উৎস ছাড়াই সেখানে পড়ে আছে
৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা
১০ টাকা বাঁচাতে সকালে ঘুমের ভান করে পড়ে থাকা
আমার কাছে এ টাকা, কত টাকা
তা হিসাবের বাইরে মা।


মা তুমি আশ্চর্য হবে-
সুইস ব্যাংকে পঁচতে থাকা ওই টাকা
আমাদের এবারের বাজেটের দেড় শতাংশ।
আমাদের কয়েক গ্রামের কৃষকের  
কয়েক জোড়া করে হালের বলদ কেনা যেতো এ টাকায়।


সুইস ব্যাংকের বেওয়ারিশ ওই টাকায় শোধ দেয়া যেতো
আমাদের বৈদেশিক ঋণের ১৮ ভাগ,
আর অভ্যন্তরীণ ঋণের বোঝা কমতো ১৪ শতাংশ।


নিত্য খুনোখুনি আর নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা নিয়ে
তুমি আমার চিন্তায় নির্ঘুম রাত রাত কাটাও।
অথচ ওই টাকায়-
দেশের আরো ৩২ ভাগ নিরাপত্তা ব্যয় মেটানো যেতো,
সীমান্তে চেনা অচেনা জন্তুর মোকাবেলায়
আর সার্বভৌমত্বে রক্ষার্থে
আরো ২৩ ভাগ অর্থ খরচ করা যেতো।


সার, বীজ আর সেচের অভাবে যে চাষিরা পথে বসেছে
তাদের জন্য দেওয়া যেতো আরো
অতিরিক্ত ২২ ভাগ অর্থ বরাদ্দ।
স্বাস্থ্য ও সেবার যে দুর্দশা
এ টাকা দিয়ে অনায়াসে মেটানো যেত
এ খাতে আরো ৩৪ ভাগ খরচা।


জানি তুমি আঙুলের কড় গুণে দেখছো
ওত টাকায় কত টাকা হয়?


সুইস ব্যাংকে থাকা ওই টাকায় ব্যবস্থা হতো
পরিবহন যোগাযোগের ১৫ ভাগ ব্যয়,
শিক্ষার উন্নয়নে ব্যয় মেটানো যেত ১২ ভাগের বেশি।
ওই টাকায় দেওয়া যেতো কয়েক হাজার রেজিস্টার্ড স্কুলের শিক্ষকের কয়েক বছরের বেতন-ভাতা।


ফকির-মিসকিন বলে যে টাকা ধার করছি আমরা
সুইস ব্যাংকের টাকা হলে মুখের ওপর ছুড়ে ফেলা যেতো
বৈদেশিক অনুদানের নামে পরাধীনতার  সেই ঋণ, চুক্তিপত্র।
বাজেট ঘাটতি নিয়ে সরকারের যে মরণ জ্বালা,
উপশম হতো তার ১৫ ভাগ অর্থের।


ওই টাকা দিয়ে সংকুলান হতো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১০ বছরের বাজেট
জাহাঙ্গীরনগরে শেখ হাসিনার নামে তৈরি হলের মতো
করা যেতো আরো ৩৬টি হল।
এই টাকায় ব্যয় নির্বাহ হতো
পায়রা বন্দরের ২৫ ভাগ কাজের,
হতো আরো ৪টি রুপসা সেতু।


কোটা আর খুঁটির জোরহীন ৩৩ লাখ বেকারকে
দেওয়া যেতো ১৩০০ টাকা করে,
ওই টাকায় তারা এক বছরের চাকরির
আবেদনের খরচ বাঁচাতে পারতেন।


দেশের ২২ লাখ বস্তিবাসীর
প্রত্যেককে দেয়া যেতো ২ হাজার টাকা করে,
হতো নগরীর মেট্রোরেলের ২০ ভাগ অর্থের ব্যবস্থা,
প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে
বিলি করা যেতো আড়াই কোটি টাকা করে।


মা-
এদেশে ফোরজি এলেও
এখনো ক্ষুধাপীড়িত ২ কোটি ৬৩ লাখ মানুষ,
ওই টাকায় সারাদেশের
কয়েকশ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা পাকা করা যেতো,
দেশের কয়েক হাজার মসজিদে নিয়োগ দেয়া যেতো
আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন ইমাম।


কোরআন পড়ার জন্য তোমার চশমা বদলাতে
যেখানে আমাকে হিশশিম খেতে হয়,
সেই দেশে সানি লিওনকে দেখার
টিকিটের দাম ১৫ হাজার টাকা!
বিপিএলে আফ্রিদি-গেইলরা পায় কোটি টাকা,
অথচ কয়েক হাজার টাকার জন্য
পরীক্ষায় টিকেও বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেলে
ভর্তি হতে পারে না শত মেধাবী।


মেয়ের বিয়ের জন্য বাজারে চাঁদা তুলতে হয়
আমাদের গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাকে,
আর নকল সনদ দেখিয়ে
চাকরি মেয়াদ বাড়িয়ে নেয় সচিবরা।
৭১’এ কলকাতায় বসে পাশা খেলা
অনেকেই এখন মুক্তিযোদ্ধা!
আর সাড়ে ৭ কোটির বাকিরা প্রায় সবাই মূল্যহীন।


তবু তোমার মতো লাখো মায়ের
সন্তানের পায়ে ভর দিয়েই,
এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।


সব যন্তর-মন্তর একদিন শেষ হবে,
কমবে সুইস ব্যাংকের বান্ডিল-
বিদেশি নাগরিকত্বধারী সন্তান-সন্ততিওয়ালা
উজির-নাজিরদের ক্ষমতাও একদিন শেষ হবে শিগগির।


হীরকের রাজা ভগবান নয়, নশ্বর মানুষমাত্র
একদিন প্রমাণ হবে সব।


-ঢাকা, ০৮ এপ্রিল-২৩ নভেম্বর ২০১৫ইং


(খবরে প্রকাশ ২০১৪ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক!দের পাঠানো প্রায় ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা জমা পড়েছে। ওই টাকায় কত কি হতো আমাদের, ৬-৬টা মাস ওই দুর্ভাবনা থেকে লেখা...)