সবুজের বুকে টকটকে রক্তজবা - আমার বাংলাদেশ।
এখানে নীলাকাশের নিচে আছে বিস্তীর্ণ দেশপ্রেম।
এখানে আছে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর, মুক্তিযোদ্ধা আবরার।
এখানে কেউ কেউ কাল কেউটে, কেউ অনিক সরকার।
আমাদেরও ইচ্ছে করে, বাংলাদেশের কোলে বসে বাংলাদেশের কথা বলি। প্রতি ইঞ্চি জমিনের কথা বলি। প্রতি কিউসেক নদীর কথা বলি।
আমাদের ভাষা সরল- সুপারিগাছে তরতরিয়ে উঠা কাঠবিড়ালি!
আবরারের মত রাত-বিরাতে ডানা ঝাপটায় আহত পাখি। হঠাৎ ঝড়ে উড়ে যায় ছাউনি, তছনছ উদ্যান।
দেশপ্রেমের ঢেউগুলোতে কত পিতার কান্নার প্রতিধ্বনি। বড্ড দুঃসময়ে লেখা জীবনের গল্পগুলো!
মানুষের মুক্তির প্রয়োজনে যুদ্ধ এখনো হয় নি শেষ।
কালো সংস্কৃতির কালো থাবায় চেতনা নিরুদ্দেশ। বিশ্বাসের গাঢ় আলিঙ্গনও করে প্রতারণা।
বিবশ অন্ধকারে হাতে হাতে ঘুরে বাইজীবাড়ির পায়েল।
আকাশ থেকে চলে যায় নীল, ঘাস থেকে সব সবুজ আর পৃথিবী থেকে সব মূল্যবোধ।
আমরা একাত্তর দেখিনি। দেখেছি নরখাদকদের বিভীষিকা। একই চিত্র নিয়ে সারিবদ্ধ কত মানচিত্র।
বাঁচার জন্য স্বদেশ ছেড়েছে লাখো রোহিঙ্গা।
তাদের ভীত চোখে এখনো লেগে জন্মভূমির মায়া।
তারা রেখে এসেছে সহস্র মাইলের স্মৃতি,
অনেকগুলি খিড়কিসহ বাড়ি, পদ্ম-ফোঁটা পুকুর।
তাদেরও একদিন ছিলো মাথার উপর পুর্ণিমার চাঁদ,
শালিকডাকা ভোর, আঙ্গিনায় লাউয়ের মাঁচা।
একদিন তাদের ছিলো নিজস্ব মতামত, পিতা-মাতা, বন্ধু, গল্প, প্রগলভতা।
দাঁতাল শুয়োর ছিনিয়ে নিলো সব, জমির শেষ অংশ।
স্বামীর সম্মুখে ধর্ষিতা স্ত্রী, বাবার কাধে সন্তানের লাশ।
পুকুরগুলো ভরে গেলো রক্তের ফিনকিতে।
সময়ের ঘূর্ণিতে ঘুরে ঘুরে আসে একাত্তর। ঘুরে ঘুরে আসে বাংলাদেশ।
নগর থেকে নগরে রক্তক্ষরণ, কষ্টের বহতা নদী।
নিষ্পেষণের কাল যেনো এক দীর্ঘ গ্রীষ্ম, ব্যথাগুলো রোদে পোড়া দুঃসহ পাতা।
একদিন তবু ঠিকই শিশির-ভোরে জেগে উঠি।
নগ্ন পায়ে মেখে নেই বাংলাদেশের মাটি।
সব ভুলে গহন মুগ্ধতায় ঘর বাঁধে সবুজ টিয়া।
ভাঙ্গা-গড়ার ঘ্রাণ বুকে নিয়ে পালকে ঘসে ঠোঁট।
আবারো স্বপ্ন দেখে গভীর অরণ্যের, শিরায় শিরায় ভালোবাসার স্বরলিপি।
গহিন গুহায় আবারো আসবে বুঝি এক মুঠো আলোর  স্ফুরণ!